সুপ্রভাত ডেস্ক »
ফলাফলমুখী হয়ে স্কুল বাছাবাছির যে প্রবণতা, তা বন্ধের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বাড়াতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ভাষ্যে, ভালো শিক্ষার্থী নিয়ে ফল ভালো করায় কোনো কৃতিত্ব নেই, বরং অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভালো ফল করানোয় কৃতিত্ব বেশি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার নিজের কার্যালয়ে ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে একথা বলেন সরকার প্রধান।
সন্তানের ভালো ফলের জন্য অভিভাবকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাবাছির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ভালো ভালো কতগুলো স্কুল আছে, আমাদের অনেকের ধারণা ওইসব স্কুলে না পড়লে নাকি পড়াশোনাই করা হয় না।’
বিভিন্ন জেলার স্কুল থেকে পাস করে নানা ক্ষেত্রে সফল হওয়ার নজিরগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জেলা স্কুলগুলো তো সব সময়ই খুব ভালো স্কুল ছিল। নাম করা ছিল। আমাদের এখনও যারা আছে, বেশিরভাগই তো ওখান থেকে পাস করে আসছে।
‘এখন কোথা থেকে ধারণা হল, মাত্র কয়েকটা স্কুল, ওখানে না পড়লে ইজ্জত থাকে না, পড়া হয় না। এই যে মানসিকতা, এটা বদলাতে হবে।’
প্রতিটি স্কুলেই যেন ভালোভাবে পড়াশোনা হয়, তা নিশ্চিতের উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
ভালো ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি করে ভালো ফল দেখানো খুবই সহজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই মানসিকতাগুলো আমাদের একটু পরিবর্তন হওয়া একান্তভাবে দরকার।
‘যদি কেউ গাধা পিটিয়ে মানুষ করতে পারে, তাকে আমি ক্রেডিট দিই। যে কিছু জানে না, তাকে শিক্ষাটা ভালো করে দিচ্ছে, যে কিছু জানে না, তাকে ভালো শিক্ষা যে দিতে পারবে, আমার মনে হয় তাদেরকে একটু বিশেষভাবে সমর্থন দেওয়া, পুরস্কৃত করা উচিৎ।’
শিক্ষার্থীদের ফেল করা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। না পড়লে তো ফেল করবেই। কাজেই এটা মাথায় রেখে সবাইকেই পড়তে হবে।
‘আজকে পরীক্ষার ফলাফলে যারা পাস করবে, তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাই। কিন্তু যারা হয়ত পাস করতে পারবে না, তাদেরকেও আমি বলব তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
দারিদ্র্য বিমোচনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উন্নয়নশীল দেশকে পরিচালনা করতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া আমরা দারিদ্র বিমোচন করতে পারি না। আমরা এমডিজি সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করেছি, এসডিজিও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা যখন আমরা পেয়েছি, তখন এই উন্নয়নশীল দেশ পরিচালনা, উন্নয়নশীল দেশের যে কার্যক্রম তার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার।’
শিক্ষা ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশই লাভবান হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারীতে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
চলমান সঙ্কটকালে সবাইকে মিতব্যয়ী ও অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে এবারের ফলাফল হস্তান্তর করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর পর বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।