আঘাত করছে ভারতীয় উপকূলের ভুবনেশ্বর ও বালেশ্বর এলাকায় #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ গত রাত ১২টার পর হঠাৎ করে পূর্ব দিকে (বাংলাদেশের দিকে) বাঁক নেওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তর মোংলা ও পায়রাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখায়। কিন্তু সেই বাঁক অল্প পরিমাণেই রয়েছে। আর বাঁক নেয়ার পর আর পূর্ব দিকে না সরে সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যদি এভাবে অগ্রসর হতে থাকে তাহলে তা ভারতীয় সুন্দরবনের উপরদিয়েই উপকূল অতিক্রম করবে সন্ধ্যা নাগাদ। আবহাওয়াবিষয়ক বিভিন্ন মডেল দেখে তাই মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ম্যাপে দেখিয়েছে, গত রাত ১২টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব দিকে টার্ন নিয়ে সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পরবর্তীতে আর পূর্ব দিকে টার্ন নেয়নি। আর এতেই বাংলাদেশের উপকূলের জন্য সুখবর।
এদিকে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকাল ৯টার পর থেকে ভূবনেশ্বর ও বালেশ্বরে আঘাত করছে। পর্যায়ক্রমে কোলকাতার খড়গপুড়ে আঘাত করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ার উপর দিয়ে এটি উপকূল অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড়ের চোখটি এভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। তবে এর অগ্রভাগের একটি অংশের প্রভাব পাচ্ছে আমাদের ভোলা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকা। প্রায় ৭০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঘূর্ণিঝড়ের ডান দিকে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকবে এটা স্বাভাবিক। সেই হিসেবে ঘূর্ণিঝড়ের চোখের ডান পাশ আমাদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুলনা, বরিশাল এলাকায় বাতাসের সাথে থাকবে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ৩৩ নম্বর বুলেটিনে বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা খেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ-ভারত সমীান্তের সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ২০০ কিলোমিটার যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এজন্য মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় উপকূলীয় এলাকায় প্রচন্ড গতিতে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে পারে। এজন্য সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং এসব এলাকার পাশ্ববর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিকের চাইতে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসময় এসময় এসব এলাকায় ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। মূলত অমাবশ্যার কারণে আজ জোয়ার বেশি থাকবে। এখন সেই অমাবশ্যার সাথে আজকের ঝড়ের যুক্ত হওয়ায় জোয়ার বেড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, পূর্ব মধ্যবঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় প্রথমে খুব শক্তিশালী ছিল। পরবর্তীতে তা গতি হারিয়েছে। একসময় এর গতিবেগ ২৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল, এখন এর গতিবেগ কমে ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার হয়েছে। তবে উপকূলে আঘাতের পর আরো কমতে থাকবে এর তীব্রতা।