সুপ্রভাত ডেস্ক »
সু চির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ এনেছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। অবশেষে আজ থেকে দেশের গণতন্ত্রকামী জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সু চির বিচার শুরু হল।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রথম দিন থেকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এই নেত্রীকে। তাঁর সঙ্গেই তাঁর দল এনএলডি-র বহু নেতা-নেত্রী গৃহবন্দি রয়েছেন এখনও। সু চির বিরুদ্ধে প্রথমে করোনা অতিমারির মধ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল জান্তা সরকার। বিদেশ থেকে আইন-বিরুদ্ধ ভাবে ওয়াকি-টকি আনানোর অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া, গত বৃহস্পতিবার সু চির বিরুদ্ধে আরও দু’টি অভিযোগ যোগ করেছে সেনা। অবৈধ ভাবে ৬ লক্ষ ডলার নগদ এবং ১১ কেজি সোনা নেওয়া। যদিও এই অভিযোগ দু’টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। এ ছাড়াও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ও সু চির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও আনা হয়েছে। আগামীকাল থেকে আলাদা ভাবে তারও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা।
আপাতত সু চির বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলির শুনানি হবে প্রতি সোমবার। তাঁকে গৃহবন্দি করার পর থেকে মাত্র দু’বার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন সু চি। দোষী সাব্যস্ত হলে অন্তত এক দশকের জেল হতে পারে তাঁর। আইনজীবী খিন ময়ুং জ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমরা আশা রাখছি ভাল কিছুই হবে। তবে সবচেয়ে খারাপটার জন্যও তৈরি থাকছি।’’ তাঁর অভিযোগ, সু চির রাজনৈতিক কেরিয়ার পুরোপুরি শেষ করে দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর জান্তা সরকার। আর সে জন্যই তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে একের পর এক অবাস্তব অভিযোগ আনা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমকে আদালতে হাজির থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে নেপিদ-র আদালতের সামনে গতকাল নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল ওয়াকি-টকি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পর্ব চলেছে বেশ কিছু ক্ষণ। সু চির আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে শুনানি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সু চির বিচারের নিন্দা করে বলেছে, ভবিষ্যতে তার নির্বাচনে লড়া বন্ধ করার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে সু চির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় বিচার শুরু হবে ১৫ জুনে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট থেকে জানা গেছে, সোমবার গণতন্ত্রপন্থি প্রতিবাদকারীরা দেশটির প্রধান শহর ইয়াংগনের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেছে, তাদের অনেকে ‘বিপ্লবী যুদ্ধ, আমরা অংশ নিচ্ছি’ বলে শ্লোগান দেয়।
কিছু আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, তারা সোমবার চে গুয়েভারার জন্মদিনে ধারাবাহিক ধর্মঘট ও প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করেছেন। লাতিন আমেরিকান বিপ্লবী চে তার মৃত্যুর পর বিপ্লবের আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল ও সু চি ও তার দলের অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক করার পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা চলছে। তারপর থেকে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে এবং সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে জাতিগত সংখ্যালঘু গেরিলা বাহিনীগুলোর ও মিলিশিয়াদের লড়াই চলছে।
সূত্র : সংবাদ সংস্থা নেপিদ, বিবিসি ও রয়টার্স