হুমাইরা তাজরিন »
ফুলকে পবিত্রতার সাথে তুলনা করা হয়। সেই ফুল যদি হয় সাদা তাহলে তাকে অনায়াসে শুদ্ধতার প্রতীক বলা যায়। সেই সাদা ফুলের বেশিরভাগই ফোটে বর্ষায়। বর্ষার জলে ধুয়ে যায় বলেই হয়তো ফুলগুলো শুদ্ধতা এবং সুগন্ধিতে ভরা। আবার বলা যায়, এসব শুভ্র সুগন্ধি ফুলই বর্ষার গৌরবকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। ঝুম বৃষ্টিতেও এসব ফুলের সুগন্ধ এড়ানো যায় না। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝিতে এসে বর্ষা আসার আগেই ফুটতে শুরু করেছে এসব ফুল। যার মধ্যে রয়েছে কদম, কামিনী, বেলি, বকুল, শাপলা, টগর, গন্ধরাজ, দোলনচাঁপা, রজনীগন্ধা, চেরি, বনজ্ুঁই, চালতার ফুল, কাঠগোলাপ, কেয়া ইত্যাদি।
কদম : বর্ষার অন্যতম ফুল ইতোমধ্যে ফুটতে শুরু করেছে। বৃতি ও পরাগচক্র সাদা এই ফুলটির দল হলুদ। যার কারণে ঘন দল ছাপিয়ে যায় এর সাদা বৃতিকে। মূলত অনেক ফুলের মঞ্জুরি এই ফুল। তবে বর্ষার সুবাসিত ফুল গুলোর মধ্যে এটি বাঙালির বেশ প্রিয় একটি ফুল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখনিতে এই ফুলকে করেছেন মহিমান্বিত। কবিগুরুর ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, করেছো দান’ গানটির চরণকে শিরোনাম করে নাটক রচনা করেছেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদও।
কামিনী: বর্ষা এলেই এই ফুলে ভরে উঠে গাছ। ছোট ছোট গোলাকার ঘন সবুজ পাতার মধ্যে থোকা থোকা সাদা রঙের ফুল ফুটে থাকে। এর গাছ অনেকটা ঝোঁপ আকৃতির হয়। চীনা এই ফুলটিকে নাকের নোলকের সাথে তুলনা করা হয়। বিকেল গড়ালেই এই ফুল ফুটতে থাকে। সুগন্ধিতে ভরপুর এই ফুল স্পর্শকাতর হয়। অল্প ছোঁয়াতেই ঝরে পড়ে। এই কারণে এর বাণিজ্যিক ব্যবহারকম। তবে এর ডাল পালা পাতা এসব বেশ মজবুত ও নান্দনিক বলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হেমন্ত মাসেও এ ফুলের দেখা মিললেও এটি মূলত বর্ষার ফুল। আসন্ন বর্ষাকে উপলক্ষ করে ফুটতে শুরু করেছে বাংলাদেশের অতি পরিচিত এই সুগন্ধি সাদা ফুল।
বেলি : কেবল বাংলাদেশে নয় , পৃথিবী জুড়ে সুগন্ধি ফুল হিসেবে বেলির কদর রয়েছে। কবিদের কবিতায় বেলির বন্দনা এ ফুলকে দিয়েছে রাজসিক মর্যাদা। বর্ষায় ফুটতে শুরু করেছে এই সুন্দর সাদা সুগন্ধি ফুলটি। এই ফুলটির পাপড়ি সুবিন্যস্ত থাকে। বেলি ফুল সন্ধ্যায় ফোটে এবং পরদিন দুপুরে ঝরে যায়। এই ফুলের মিষ্টি সুবাস আশপাশে এর অস্তিত্বের জানান দিয়ে দেয়। নারীদের সাজসজ্জায় এই বেলি ফুলের মালার বেশ কদর রয়েছে।
বকুল : বকুল ফুলের গাছ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। মাঝারি আকারের এই গাছের পাতা গুলো হয় ঢেউ খেলানো। ফুলগুলো খুব ছোট হয়। ফুলগুলো দেখতে অনেকটা তারার মতো। বকুল ফুলের রয়েছে সুমিষ্ট সুবাস। এই ফুল শুকিয়ে গেলেও এর সুবাস থাকে দীর্ঘদিন। এই ফুল রাতে ফুটে এবং সারাদিন ধরে ঝরতে থাকে। তারা আকৃতির এ ফুল নজর কাড়ে সকলের। বর্ষার এই ফুলটি ইতোমধ্যে ফুটতে শুরু করেছে।
দোলনচাঁপা: প্রজাপতির মতো দেখতে সাদা ফুলটি জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভীষণ প্রিয় ছিল। এই কারণেই কবির একটি কাব্যগ্রন্থের নামকরণও হয়েছে এই ফুলের নামে। চার পাঁপড়ি বিশিষ্ট এই ফুলটি ফোটে সন্ধ্যায়। এর মিষ্টি সুবাস যে কারো মন ভোলায়। সাদা ফুলটির বেশ কদর থাকলেও লাল , কমলাসহ কয়েকটি রঙের হয় এই ফুল। বর্ষার এই ফুলটিরও দেখা মিলছে চট্টগ্রামে।
কেয়া : জৈষ্ঠ্যের শেষ ভাগে ফোটা এই ফুলকে বর্ষার আগমনী ফুল বলা হয়। রবীন্দ্রনাথ এই ফুলকে কেতকী নামেই ডেকেছেন। তার বহু কবিতা ,গান এবং উপন্যাসে চরিত্রের নামও তিনি কেতকী রাখেন। এই ফুল থেকে সুগন্ধি তেল তৈরি করা হয়। যাকে কেওড়া তেল বলা হয়। সাদা এই সরু লম্বা পাপড়ির এই ফুলটির পাতার গোড়া কা-ের সাথে জড়ানো থাকে। পাতাগুলো অনেকটা আনারসের পাতার মতো হয়ে থাকে।
চালতা ফুল: চালতা বাংলার একটি পরিচিত ফল। চালতা ফলের গাছের দৃষ্টিনন্দিত সুগন্ধি ফুল ফুটতে শুরু করেছে। দীর্ঘ সবুজ পাতার মাঝে সাদা ও সুন্দর চালতা সহজেই চোখে পড়ে না। তবে এই ফুল যারাই দেখেছেন মুগ্ধ না হয়ে পারেননি। তবে দুই একদিনেই এই ফুল ঝরে পড়ে। ফুলের বাইরে থাকে পাঁচটি বৃতি। এই বৃতিই পরে ফলে পরিণত হয়। এই বৃতির পরই পাঁচটি পাপড়ি। পাপড়িগুলো ঘিরে রাখে চাকতির মতো গোলাকার হলুদ গর্ভদ-কে। গর্ভদ-ের মাঝখানে ১৫টি পুংকেশর তারার মতো ছড়ানো থাকে। মনোরম এই ফুলটির সুগন্ধি বিমোহিত করে পথচলতি মানুষকে।