সুপ্রভাত ডেস্ক »
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাত দিন পর তাদের অনশন ভেঙেছেন।
বুধবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
এর আগে ভোর ৪টার দিকে জাফর ইকবাল স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ভিসির বাংলোর সামনে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন।
প্রায় দুই ঘণ্টা তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কথা শুনেন। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে রাজি করান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে অনশন ভাঙবেন।
সকাল ৮টায় অনশন ভাঙার কথা থাকলেও সবার হাসপাতাল থেকে আসতে এবং প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়ে যায়।
জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক প্রত্যেক অনশনকারীর কাছে গিয়ে তাদের মুখে পানি তুলে দেন। এ সময় অনেক অনশনকারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাফর ইকবাল তাদের গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং সান্ত্বনা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ’এনে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার।
শুরুতে মোট ২৪ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। এর মধ্যে নয়জন ছাত্রী এবং ১৫ জন ছাত্র। একজন অনশনকারীর বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে তিনি প্রথম দিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান। পরে তাদের সঙ্গে আরও পাঁচজন যুক্ত হন।
এই অবস্থার মধ্যেই ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে পৌঁছান জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পরে সাংবাদিকদের সামনে জাফর ইকবাল বলেন, “তোমরা আমাকে কথা দিয়েছ, আজকে অনশন ভাঙবে। আমি চাচ্ছিলাম এখনি ভাঙাতে; কিন্তু তোমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ভাঙবে।
“তোমরা কথা দিয়েছ তো? ঠিক করে বল?”
এ সময় শিক্ষার্থীরা তাতে সায় দিয়ে বলেন- ‘জি স্যার’।
জাফর ইকবাল বলেন, “শোন তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ? তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ! বাংলাদেশের ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, এখানকার ভাইস চ্যান্সেলর পদত্যাগ করলে তারা পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ, এটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভাইস চ্যান্সেলর আছে, যাদের আদর্শ এত বেশি যে উনারা অন্যের… দেখে নিজেরা পদত্যাগ করবেন। যদিও আমার ধারণা, এ শখ মিটবে না।“
“আমি শুধু এটা বলতে চাই, তোমরা যেটা করেছ, সেটার তুলনা নেই। তোমরা যে আন্দোলনটা তৈরি করেছ, বাংলাদেশের প্রতিটি ইয়াং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।”, বলেন জনপ্রিয় এই লেখক।
তিনি আর বলেন, “আমার সঙ্গে অনেক বড় বড় মানুষ যোগাযোগ করেছেন। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন। এজন্য আমি এখানে এসেছি।”
সূত্র : বিডিনিউজ