সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস গড়লেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এ জয়ের মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় সাক্কু যুগের অবসান ঘটালেন তিনি। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর এই প্রথম নৌকার প্রার্থী মেয়র পদে জয় পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত বেসরকারি ফল অনুযায়ী রিফাত তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত করেন। ইভিএমে নেওয়া ভোটের হিসাবে রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
বুধবার রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ ফল ঘোষণা করেন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য তিন প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে ২৯ হাজার ৯৯, রাশেদুল ইসলাম হাতপাখায় তিন হাজার ৪০ ও কামরুল আহসান বাবুল হরিণ প্রতীকে দুই হাজার ৩২৯ ভোট পেয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে মোট দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটার ছিলেন। এরমধ্যে এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৪টি ভোট পড়ে। তবে বাতিল হয় ৩১৯ ভোট। ভোট পড়েছে ৫৮.৭৪ শতাংশ। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হয়েছে। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। খবর বাংলাট্রিবিউন।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। সকাল ৯টার পর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। পরে জয়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় রিফাতকে। দলীয় কোন্দল এবং নেতাকর্মীদের একত্র করে নির্বাচনে জয়ী হতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও বেশ সহায়তা করেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, গত দুই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আফজল খান এবং তার মেয়ে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। ওই দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশের হস্তক্ষেপে বাবা ও মেয়ের পরাজয় হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে গত দুই নির্বাচনে এই গ্রুপিং কোন্দলের কথা তেমন প্রকাশ্যে আসেনি। তবে এবার শহর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্থানীয় খান পরিবার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কোন্দল অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসে। আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের আস্থাভাজন আরফানুল হক রিফাতের বিপক্ষে প্রার্থী হন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। মাসুদ পারভেজ খান মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তবে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে মাসুদ শেষ সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
এতে ভোটের মাঠে বেশ ভালো প্রভাব পড়ে। নৌকার প্রার্থী রিফাতকে জয়ী করতে দলের কোন্দল কমিয়ে এনে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক করে কাজ করেন।
আরফানুল হক রিফাত কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন।