সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক
মাশরাফি কোন ফরম্যাটেই জাতীয় দলে নেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলা না ছেড়েও হিসেবের বাইরে। দলের অপরিহার্য্য সদস্য হয়েও অধিনায়কত্ব হাতছাড়ার হওয়ার পর মনের দুঃখে আর দল পরিচালনা করতে না চাওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করা মুশফিকুর রহিমও নেই সম্ভাব্য অধিনায়কের তালিকায়।
তাই সাকিব আল হাসানের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে লিটন দাস এবং মেহেদি হাসান মিরাজের নাম, কিন্তু তারাও কি অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের ধারে কাছে? ব্যাটিং ও বোলিং পারফরমেন্স, নেতৃত্ব গুণ, ক্রিকেট বোধ, বুদ্ধি, জ্ঞান, দল পরিচালনায় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিচারে সাকিব যোজন যোজন এগিয়ে। কোন হিসেব নিকেশে অধিনায়ক মনোনয়নে সাকিবের ধারে কাছে নেই লিটন এবং মিরাজ। তাই ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকেই ‘অভিয়াস চয়েজ’ বা অনিবার্য্য পছন্দ বলে অভিহিত করেছেন সবাই। ক্রিকেট বোর্ড কর্তারাও এর বাইরে নন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনসহ বোর্ডের বেশির ভাগ কর্তাই অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকেই ফার্স্ট চয়েজ বলে মন্তব্য করেছেন।
তাহলে কেন এই বিলম্ব? তামিম ইকবাল অধিনায়কত্ব ছাড়ার এক সপ্তাহ পরও কেন নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে কারো নাম ঘোষণা করা গেলো না? বিসিবির সভা ডেকেও কি কারণে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হলো না? এসব নিয়ে ক্রিকেট পাড়া ও জনসাধারণে নানা প্রশ্ন, গুঞ্জন। এই গুঞ্জনে কিছু কথাও চারপাশে উচ্চারিত হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বোর্ড সাকিবকে অধিনায়ক করার ব্যাপারে দ্বিধা বিভক্ত? সাকিবকে দীর্ঘ মেয়াদে সব ফরম্যাটে অধিনায়ক করার যৌক্তিকতা নিয়েও নাকি বোর্ডে বিভক্তি আছে। আবার এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, সাকিব নিজেই টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির পর আর নতুন করে ওয়ানডে ক্যাপ্টেন্সি করতে আগ্রহী নন। এর কোনটা সত্য, তা জানতেই আগ্রহী সবাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটু আধটু মত পার্থক্য থাকলেও টেস্টের পাশাপাাশি সাকিবকে ওয়ানডে ফরম্যাটে অধিনায়ক করা নিয়ে বোর্ড মোটামুটি রাজি। বড় ধরনের কোন সংশয়, সন্দেহ নেই, কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। যাকে দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, সেই সাকিবই নাকি টেস্ট, টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডেতে দীর্ঘ মেয়াদে দল পরিচালনা করতে নারাজ। এ ব্যাপারে বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা কিছু বলতে বা জানাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খোদ সাকিব দীর্ঘ মেয়াদে তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন্সি করতে উৎসাহী নন। এমনও শোনা যাচ্ছে, সাকিব ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর আর ওয়ানডে ক্যাপ্টেন্সিই করতে নাকি ইচ্ছুক নন। আবার এমন কথাও শোনা যাচ্ছে, সাকিব অনেক ভেবে চিন্তে নিজের ব্যক্তি জীবন, কর্মজীবন ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের পাশাপাশি তিন ফরম্যাটে জাতীয় দল পরিচালনায় উৎসাহী নন। অন্তত যে কোন এক ফরম্যাটে ক্যাপ্টেন্সি না করার কথা ভাবছেন সাকিব।
সাকিব হয়তো হিসেব করে দেখেছেন, তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলের দীর্ঘ মেয়াদী ক্যাপ্টেন হওয়া মানে তার বর্তমান যে জীবন চরিত, যেভাবে পথ চলা, তা বদলাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না-সাকিব এখনোও মাঝে-মধ্যে এই কারণ, সেই কারণ দেখিয়ে বা ছুটি নিয়ে কোন না কোন সিরিজ খেলা থেকে বিরত থাকেন। আবার কখনোবা এক সিরিজের একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে অংশ নেন না। কিন্তু সব ফরম্যাটে অধিনায়ক হয়ে গেলে আর তা করা যাবে না। সব ফরম্যাটে খেলার পাশাপাশি সর্বাধিক মনোযোগ, মনোসংযোগী হতে হবে। তাতে করে তার সারা বছরে তিনি যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলেন, তা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি পরিবার মানে স্ত্রী ও সন্তানের সাথে দেখা করতে ও তাদের সান্নিধ্যে কাটাতে বছরে যে কয়েকবার ছুটি নিয়ে আমেরিকা যেতে হয়, তাও যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে। এর বাইরে তার সামাজিক ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ড রয়েছে। তিনি বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত। সেখানে তার কমিটমেন্ট আছে। এছাড়া মাঝে-মধ্যে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে ঠিকমত সময় দিতে হয়। তিন ফরম্যাটে সারা বছর জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তাও সম্ভব হবে না। সব মিলেই সাকিব অন্তত এক ফরম্যাটে দীর্ঘ সময়ে ক্যাপ্টেন্সি করা থেকে বিরত থাকার কথা ভাবতে চান। এখন দেখার বিষয় কোন ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব করতে চান না সাকিব। তা নিয়েও দু’রকম কথা শোনা যাচ্ছে। একপক্ষের দাবি, সাকিব টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি করতে চাচ্ছেন না। শুধু ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্ট মানে সাদা বলে অধিনায়কত্ব করার কথা ভাবছেন। আবার অন্যপক্ষ বলছে, ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সাকিব নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন। মানে টেস্ট, টি-টোয়েন্ট ক্যাপ্টেন থাকবেন। তবে ভেতরের খবর, সাকিব সম্ভবত টেস্টে অধিনায়ক না থাকার কথাই জোর দিয়ে ভাবছেন। তাই ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এ বছর ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি নাও করতে পারেন। শোনা যাচ্ছে, একই সময় (ডিসেম্বরে) আরব আমিরাতের আবুধাবি-দুবিাইয়ে যে টি-টেন কিংবা ফ্রাঞ্চাইজি আসর বসবে, তাতে খেলার সব কথা বার্তা চ’ড়ান্ত করে ফেলেছেন সাকিব। যদি অধিনায়ক থাকেন, তাহলে নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সে কারণেই দুবাই-আবুধাবির টি-টেন লিগ খেলতে সাকিব নিউজিল্যান্ড সফর থেকে বিরত থাকার চিন্তা করছেন। এমন আভাস ও ইঙ্গিতও নাকি দিয়েছেন বোর্ড কর্তাদের। তাই ধরেই নেয়া যায় যে সাকিব নিউজিল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন না। এ কারণেই দীর্ঘ মেয়াদে তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক থাকছেন না সাকিব। সে কারণে বাধ্য হয়েই বিসিবি বিকল্প অধিনায়কের খোঁজে রয়েছে। পুরো বিষয়টার যুক্তিযুক্ত সমাধানের জন্যই ওয়ানডে অধিনায়ক নির্বাচনে বিলম্ব। তবে এটা ঠিক যে, এশিয়া কাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপে অধিনায়ক হবেন সাকিবই। এরপর যে কোন এক ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন তিনি। খবর জাগোনিউজ’র