রাজিব শর্মা »
বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধে গতকাল মঙ্গলবার থেকে সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সহসা বন্ধ হচ্ছে না খাতুনগঞ্জের বাজারে এ ভোজ্যতেলের বাজার। প্রতিদিনের মতো গতকালও সচল ছিল মধ্যস্বত্ব কারবারিদের ডিও বাণিজ্য। বাজারে রয়েছে শত শত মণ খোলা সয়াবিন ও পাম তেল। খোলা সয়াবিনসহ অন্যান্য খোলা ভোজ্যপণ্যের ব্যবসা সহসা বন্ধ হচ্ছে না বলে জানান খাতুনগঞ্জের মজুদদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তারা দুষছেন সরবরাহকারী মিলারদেরকে।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকারি বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলোতে ড্রামে ড্রামে সাজানো রয়েছে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খুচরা বিক্রেতারা বিক্রির জন্য কিনছে খোলা সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্যপণ্য। ট্রাকে তোলা হচ্ছে কেনা সয়াবিন তেলের ড্রাম। এমনকি খোলা সয়াবিন বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোন কোন প্রতিক্রিয়া নেই অনেক ব্যবসায়ীর।
খাতুনগঞ্জের অন্তত ১২ জন পাইকারি তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও বাজারে তেলের মিল মালিকরা খোলা তেল বাজারজাত করছে। এতে এ ব্যবসায় সচল রয়েছে শত শত ডিও ব্যবসায়ী। বাজারে রয়েছে কোটি কোটি টাকার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল। এমনকি নিয়মিত দর দিচ্ছে ফড়িয়া (ডিও) ব্যবসায়ীরাও। খোলা বাজারে সয়াবিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে মিল মালিকদের। নয়তো এ ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব না বলে তারা জানান।
খাতুনগঞ্জের সয়াবিন তেলের এক মজুদদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সরকার আগস্টের প্রথমদিন খোলা সয়াবিন বিক্রির ঘোষণা দিলেও এখনো মিল মালিকরা তাদের বিক্রি ও সরবরাহ সচল রেখেছে। সোমবারেও মিল মালিকরা মধ্যস্বত্ব কারবারিদের কাছে খোলা বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি করেছে। এমনকি সোমবারেও আমরা তাদের থেকে মাল কিনেছি। এখন যদি মিলাররা খোলা সয়াবিন বাজারজাত বন্ধ না করে তাহলে এ ব্যবসা বন্ধ হবে না। সরকারকে আগে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু আমরা ব্যবসা করি, লাভ পেলে পণ্য কিনে বিক্রি করবো। মিল মালিকরা বন্ধ করলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে।’
খাতুনগঞ্জের আরেক ডিও ব্যবসায়ী বলেন, ‘খোলা সয়াবিন বন্ধ হচ্ছে গত এক বছর ধরে কিন্তু প্রশাসন মূল গোড়ায় না গিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে তাদের দায় সারেন। এভাবে তো বাজারে খোলা তেল ব্যবসা বন্ধ হবে না।
এ ব্যবসা বন্ধ করতে হলে খোলা তেল সরবরাহকারি মিল মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে প্রশাসনের। সুতরাং আমাদের মনে হচ্ছে না খোলা ভোজ্যতেল সয়াবিনের ব্যবসা সহজে বন্ধ হবে।’
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোজ্যতেল খোলা সয়াবিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অনেকদিন ধরে। কিন্তু মিলারদের সরবরাহ খোলা রেখে খাতুনগঞ্জের ব্যবসা বন্ধ করা কিভাবে সম্ভব? এখনো অনেক ব্যবসায়ীর কোটি কোটি টাকার সয়াবিন তেল মজুদ রয়েছে। ডিও ব্যবসায়ীরাও তাদের রেটে মাল বিক্রি করছে। সরকারের বন্ধ করতে হবে মিলারদের ভোজ্যতেল সরবরাহ বাণিজ্য। তাহলে ক্রমান্বয়ে এ ব্যবসা বন্ধ হবে।’
এদিকে, খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধে কঠোর হবে বলে জানায় বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে সর্তক করা শুরু করছি। আজকেও (মঙ্গলবার) খাতুনগঞ্জের কয়েকটি দোকানে সর্তক করেছি। এ ব্যবসা বন্ধে আমরা শীঘ্রই কঠোর অবস্থানে যাবো।
মিলারদের খোলা তেল বিক্রি অব্যাহত রেখে কিভাবে বাজারে বিক্রির বন্ধ করবে ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) অভিযানের পর একটি কোম্পানির মিলে তদারকি করেছি। সেখানে তারা সোমবার পর্যন্ত খোলা সয়াবিন বিক্রির সত্যতা জানতে পারি। মিল মালিকরা আমাদের বলেন, যেহেতু ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিক্রির শেষ দিন। তাই সরকারের নির্দেশনা অনুসারে তারা বিক্রি করছে। ১ আগস্ট থেকে তারা খোলা সয়াবিন সরবরাহ বন্ধ করছে বলে আমাদের জানান। তবে তারা গোপনে খোলা তেল বাজারজাত করছে- এমন জানতে পারলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
খাতুনগঞ্জের বাজারে কোটি টাকার খোলা সয়াবিন এখনো রয়ে গেছে, এসব সয়াবিন ব্যবসায়ীরা করবে কি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদারকি করছি ডিও ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু খোলা সয়াবিন তেল রয়েছে। তবে এসব সয়াবিন তেল বিক্রি পর্যন্ত ডিও ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন নির্দেশনা আসতে পারে।’