নিজস্ব প্রতিবেদক »
চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় দেড়শো শয্যার বার্ন ইউনিট হচ্ছে। চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে এখনো চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। তার আগেই গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থাপনা সরাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় চমেকের ছাত্রাবাসের পাশে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তা শেষ হয় দুপুর আড়াইটায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা।
এ প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ‘এ এলাকায় চীনের অর্থায়নে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট গড়ে তোলা হবে। তার জন্য দ্রুত জায়গা খালি চেয়েছে চীনা প্রতিনিধি দল। বাসিন্দাদের ২০ মার্চের মধ্যে সরে যেতে বলা হয়। কিন্ত অনেকে সরে যাননি। আমরা সেজন্য অভিযান পরিচালনা করছি। এখান থেকে বেশিরভাগ স্থাপনা সরানো হয়েছে।’
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টায় গোঁয়াছি বাগান এলাকায় আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা এবং অন্যান্যরা। প্রথমে রাস্তার পাশের স্থাপনা ভাঙা হয়। পরে গোঁয়াছি বাগানের ভেতরের স্থাপনা সরোনো হয়। আট-নয় জন শ্রমিক কোদাল, হাতুরি দিয়ে স্থাপনা ভাঙতে সহায়তা করে।
এ সময় স্থানীয়রা তাদের ঘরের জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে যান। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকায় তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ বড় বড় ট্রাক এনে ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ আবার নিজের ঘর নিজে ভেঙে টিন, ইট ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
মর্জিনা আক্তার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বার্ন ইউনিট হোক সেটা আমরাও চাই। কিন্ত তার আগে আমাদের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো। আমার স্বামী মেডিক্যালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। অল্প বেতনে কিভাবে বাইরে থাকবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। আর মাসের মাঝামাঝিতে আমাদের ঘর ভাঙা হচ্ছে। নতুন বাসা নিতেও কষ্ট হয়েছে আমাদের।’
চূড়ান্ত চুক্তি বিলম্বে হওয়া প্রসঙ্গে সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এখনো চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। ১৩ মার্চ হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়েছে। চীনা প্রতিনিধি দল তার জন্য তাদের দেশে কাজ করছে। সব শেষ করে তারা আবার ঢাকা আসবেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে তারা ফিরবেন। তারপরই চুক্তি সম্পন্ন হবে।’
স্থাপনা সরানো প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন,‘২০ মার্চের মধ্যে স্থাপনা সরাতে নোটিশ দেওয়া হয়। সরে না যাওয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। চীনারা দ্রুত কাজ শুরু করতে চায়। খালি হলে তারা কাজ শুরু করবেন।
কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আপাতত এখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে কর্মচারীদের জন্য আলাদা কোয়ার্টার করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘোষণা হলেই কাজ শুরু হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৭ বছর ধরে চমেক হাসপাতালে চীনের অর্থায়নে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করতে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারিতে চমেক হাসপাতালে প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করে ৫ সদস্যের চীনা প্রতিনিধি দল। তারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এতে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন চীনা দল। এদিন বার্ন হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত গোঁয়াছি বাগানের জায়গাটি পরিদর্শন করে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে। বাকি শুধু চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার। চুক্তি হলেই অবকাঠোমো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
চমেক হাসপাতালের পেছনে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় প্রায় এক একর জায়গায় নির্মাণ হবে বার্ন ইউনিট। প্রকল্পটিতে ১৫০টি শয্যা থাকবে। তার মধ্যে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টি আইসিইউ, এইচডিইউ ২৫টি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার করা হবে ২টি। রোগী আনা নেয়ার সুবিধার জন্য তিনটি রাস্তা বানানো হবে। চট্টেশ^রী রোডের দিক থেকে একটি রাস্তা হবে। সেটি হবে বার্ন হাসপাতালের প্রধান রাস্তা। চমেক হাসপাতালের পেছনে ছাত্র হোস্টেলের দিক থেকে আসবে আরও একটি রাস্তা। সর্বশেষ রাস্তাটি হবে মিজান হোস্টেলের দিক দিয়ে। সেখানে মাঝখানে পাহাড় থাকায় তা ঘুরিয়ে ওয়ার সিমেট্রি হয়ে আনা হবে।