নগরে রথযাত্রা উৎসবে ভারতীয়
সহকারী হাই-কমিশনার রাজীব
চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেছেন, দুইশ বছরের প্রাচীন নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথযাত্রায় মানুষের মিলনমেলা দেখে আমি অভিভূত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের আত্মার সম্পর্ক। ভূ-তাত্ত্বিক সীমানা আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হবে না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নগরের নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এলাকায় কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে রথপরিক্রমা অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে উৎসবে আশীর্বাদক ছিলেন চট্টগ্রাম কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য। প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শ্যামদাশ ধর। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন চমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিনয় পাল। অনুপম দেবনাথ পাভেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, পুলক খাস্তগীর ও রুমকি সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, সমাজসেবক অনুপ বিশ্বাস, মো. সাহাবউদ্দিন, প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার চক্রবর্তী, তুলসীধাম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক স্থপতি প্রণত মিত্র চৌধুরী। বক্তব্য দেন উৎসব কমিটির কর্মকর্তা ডা. মনোজ চৌধুরী, সোনারাম ধর, শান্তময় দাশ, হিরন্ময় ধর, বিধান ধর, হরিশংকর ধর, চন্দন ধর, ডা. অপূর্ব ধর, রপন ধর, শিবু প্রসাদ ধর, বরুন হাজারী, প্রদর্শন দেবনাথ, রতন দেবনাথ সহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ। এসময় অতিথিদের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। অতিথিরা তুলসীধামের স্মরণিকা ‘তপোবন’ রথযাত্রা সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, চট্টগ্রাম সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে। রথযাত্রা উৎসবে সবাই অংশগ্রহণ করছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পালন প্রার্থনার সমতুল্য। শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য বলেন, শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবের আশীর্বাদে জীবন হয় সুন্দর। সমস্যায় ঘেরা জীবনে মুক্তি দেন ত্রি-দেবতা। জীবন রথ পরিচালিত করতে এই রথযাত্রা দেয় অনুপম শিক্ষা।
শ্রীশ্রী মদনমোহন নরসিংহ গোপাল জীও’র মন্দির থেকে ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে রথারোহণ করানো হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা শুরু করেন তুলসীধামের মোহন্ত এবং অতিথিরা। কেন্দ্রীয় রথের সাথে মহাশোভাযাত্রা সহকারে হাজারী লেইন শ্রীকৃষ্ণায়ন রথ, পাথরঘাটা জগন্নাথ মন্দিরের রথ, গঙ্গাবাড়ির রথ, গৌর গিরিধারী মন্দিরের রথ, সদরঘাট পার্বতী ফকির পাড়ার রথ, মাইজপাড়ার রথ, ফিরিঙ্গীবাজার শাহাজীপাড়ার রথ, টেকপাড়ার রথ, এনায়েত বাজার কেদারনাথ তেওয়ারী কলোনির রথ, টাইগারপাস জগন্নাথ সংঘের রথ, পুরাতন কাস্টমস এলাকার রথ, ইপিজেড শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথসমূহ পরিক্রমায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় অদ্বৈত-অচ্যুত মিশনের ভক্ত, জন্মাষ্টমী ছাত্র পরিষদ, বিভিন্ন মন্দির ও ধর্মীয় সংগঠনের ভক্তরা যোগ দেন।
সিএমপির রোডম্যাপ অনুযায়ী এসব রথ নিউমার্কেট থেকে লালদীঘির মোড় ঘুরে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসে। সেখান থেকে চেরাগী পাহাড় হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে লাভলেইন সড়ক দিয়ে পুনরায় নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এসে শেষ হয় পরিক্রমা।
এদিকে তুলসীধামে রথযাত্রা উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল- নামযজ্ঞ, মদনমোহন পূজা, জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্রের পূজা, মহাপ্রসাদ বিতরণ।