নিজস্ব প্রতিবেদক »
শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম এখনো চড়া। কিছুটা বেড়েছে মাছের দামও। গতকাল বৃহস্পতিবার রেয়াজউদ্দিন বাজার ও বক্সিরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বেশ কিছু নিত্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে সবচেয়ে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দামও।
গতকাল বক্সিরহাট ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। একমাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০০ টাকা ও লেয়ার মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ডজন প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। চলতি মাসের জানুয়ারির ১ তারিখে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ২৩০ টাকা। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২৫ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে ডিমেরও। প্রতি ডজন মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা টাকা। আর সুপারশপগুলোতে ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকার বেশি। যা গত জানুয়ারির ১ তারিখে প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১১৫ টাকা।
বক্সিরহাটে ডিম কিনতে আসা মো. শফি বলেন, ‘ডিম এখন আমাদের মতো গরিবের খাবার না। মাছ, মাংস অনেক আগেই ছেড়েছি। ডিম খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে।
ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বক্সিরহাটের জাহানারা পোল্ট্রির ম্যানেজার মোহাম্মদুল করিম বলেন, ‘আমরা যখন ফার্ম থেকে পাইকারিভাবে মুরগি কিনি তখন বলা হয় খাবারের দাম বেড়েছে, বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে, মুরগির ওষুধ, টিকার দাম বেড়েছে- এ কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বেশি দামে কেনা তাই আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। খাবারের দাম বাড়ার কারণে নাকি মুরগির দাম বেড়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।’
বাজারে ডিম ও মুরগির দাম বাড়লেও গরুর মাংস গত কয়েক মাস ধরে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খাসির মাংস কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়ে ১১০০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। গতবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়েও খাসির মাংসের দাম ছিল ৮৫০ টাকা।
তাছাড়া মুরগি ও ডিমের মতো একই অজুহাতে সপÍাহের ব্যবধানে মাছের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা। গতকাল কাতলা মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়, পাবদা ৪৫০ টাকা, মলা ৩৬০ টাকা, শোল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ছোটগুলো ৫০০ আর বড় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকা শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সকল ধরনের সবজির দাম একটু কম থাকলেও গতকাল শীতকালীন কয়েকটি সবজি ছাড়া অন্যগুলো কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ২০ টাকা, প্রতি কেজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও টমেটো কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে শিমের কেজি এখন ৪০ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ৮০-১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ভালো মানের প্রতি কেজি লাউ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, নতুন আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে মশলাজাত পণ্যে আমদানি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে দেশি নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা দরে। তাছাড়া অব্যাহত রয়েছে আদা-রসুনের মূল্য বৃদ্ধি। এ দুই পদের মসলা কিনতে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি দেড়শ থেকে ২০০ টাকা।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক প্রত্যাহার করলেও বাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। উল্টো সরু চাল বিক্রি হয়েছে তিন থেকে চার টাকা বাড়তি দামে। বাজার ও মান ভেদে সরু (নাজির-মিনিকেট) চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের (পাইজার/লতা) চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এবং মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) চাল ৬ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজার ঘুরে বিভিন্ন ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কয়েক মাস বাজারে কিছুটা শাকসবজিতে স্বস্তি থাকলেও অনান্য নিত্যপণ্যে কোনো ধরনের স্বস্তি নেই। নিত্যপণ্যের দামের পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের হাত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। নতুবা বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। আর স্বাভাবিক কারণে হলে সমস্যা খুঁজে অবশ্যই এর সমাধান করা উচিত।