ভূঁইয়া নজরুল »
সাতকানিয়া কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি (সেটার) করেছেন। গত সোমবার মডারেশন করতেও গিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। কিন্তু উনার ছেলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম কলেজ থেকে অংশ নিচ্ছে। আর তা জানাজানি হওয়ার পর তিনি বোর্ড থেকে চলে আসেন। এরকম ১১ জন শিক্ষক গত সোমবার মডারেশন (পরিশোধন) করতে গিয়ে ফেরত এসেছেন। তাহলে তারা গত জুনে যে প্রশ্নপত্রগুলো করেছেন সেগুলোর কি হবে?
ঘটনা সম্পর্কে জানতে গতকাল কথা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি গত জুনে জীব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি (সেটার) করেছি। একজন শিক্ষক একটি করে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। প্রতিটি পত্রে চারজন, সেহিসেবে দুই পত্রে আট জন শিক্ষক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছেন। এসব প্রশ্নগুলো সঠিক আছে কিনা তা মডারেশনের জন্য সাত থেকে আট দিন আগে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। সকাল ১০টায় যাওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে বলা হলো কারো সন্তান বা আত্নীয় স্বজন পরীক্ষার্থী থাকলে তিনি মডারেশন হিসেবে থাকতে পারবেন না। তাই আমার মতো আরো ১০ জন চলে আসি।’
কিন্তু আপনি যে প্রশ্ন করেছিলেন সেটির কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা তো আমি জানি না। আমাকে যদি বোর্ড থেকে বলা হতো আপনার সন্তান বা কেউ পরীক্ষার্থী থাকলে আপনি আসতে পারবেন না। তাহলে তো আসতাম না। এখন প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পর মডারেশন করতে যাওয়ার পর বলায় আমাদের একটু মানহানিও হলো।
একই মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম কলেজের দর্শন বিষয়ের প্রফেসর দৌলতুর রহমান। তিনি বলেন,‘ আমিও প্রশ্নপত্র প্রণয়নে (সেটার) হিসেবে কাজ করেছি। আমার ছেলে এবার চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আজ (মঙ্গলবার) মডারেশন করতে যাওয়ার পর বলা হলো করা যাবে না, সেটারের আগে বললে এটি আরো ভালো হতো।’
তবে এতে বোর্ডের কোনো দোষ নেই বলে জানান চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, শিক্ষাবোর্ড থেকে যখন সেটার কিংবা মডারেশনের জন্য অভিজ্ঞ এসব শিক্ষকদের ফোন করা হয় তখন যদি বলতো যে আমার সন্তান এবারের পরীক্ষার্থী তাহলে আমরা তাদের তালিকায় রাখতাম না।
কিন্তু এসব শিক্ষক যেসব প্রশ্নপত্র করেছেন সেগুলোর কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেসব প্রশ্নপত্র বাতিল করে আমরা নতুনভাবে সেটার নিয়োগ দিচ্ছি। নতুনভাবে সেটার ও মডারেশন নিয়োগের মাধ্যমে এসব প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করা হবে।
অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬১ সালে প্রণীত ‘পাবলিক পরীক্ষা প্রবিধনামালা’ অনুযায়ী সেটার বা প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী, মডারেটর বা প্রণীত প্রশ্ন্নপত্র যাচাইবাছাইকারী (পরিশোধক) এবং পরীক্ষক (যিনি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন) তাদের সন্তান বা নিকটতম সম্পর্কের কেউ থাকলে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
প্রশ্নপত্র বাতিল হওয়া, নতুন করে প্রশ্নপত্র তৈরি, আর্থিক অপচয় কিংবা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি বা ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন,‘ যদি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শনাক্ত হতো তাহলে আমরা তা নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। কিন্তু এখন যেহেতু শনাক্ত হয়ে গেছে তাই আমরা সেসব প্রশ্নপত্র বাতিল করে নতুন করে প্রণয়ন ও মডাটেরশন করবো। এতে কোনো সমস্যা হবে না।’
উল্লেখ্য, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ২৮ পত্রের প্রতি পত্রে চারজন শিক্ষক করে ১১২ জন শিক্ষক মডাটেরশনের কাজ করছে। গত সোমবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।