মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ ও ক্ষমতা লিপ্সার জন্য হযরত ইমাম হোসাইন (রা) কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হননি। ইয়াজিদি দুঃশাসনের কবর রচনা করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। ইয়াজিদি অপশাসন রুখে দিয়ে ন্যায়নীতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিল নবীদৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইনের (রা) দর্শন ও শিক্ষা। সর্বাবস্থায় অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে আপসহীন নির্ভীক ভূমিকা পালনই শাহাদাতে কারবালার অন্তর্নিহিত দর্শন।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের ৫ম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে মাহফিলের ৫ম দিনে সভাপতিত্ব করেন বোয়ালখালী হাওলা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন শাহজাদা শাহসুফি মাওলানা মুহাম্মদ নঈমুল কুদ্দুস আকবরী।
মাহফিলে আলোচক ছিলেন ভারত কাসওয়াসা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন আল্লামা শাহাসূফি সৈয়দ মুহাম্মদ আশরাফ আশরাফী আল জিলানী আস সিমনানী। তিনি বলেন, মহররম মাসে ৬১ হিজরিতে নবী পরিবারের ওপর চলা নৃশংসতা যুগ যুগ ধরে মুমিন মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে। কারবালা শুধু শোক নয়, মুসলমানদের সাহস ও শক্তির প্রেরণার উৎস।
মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আল্লাহকে চেনা ও তাঁরই দর্শন লাভে যাঁরা ধন্য হন তাঁরাই মূলত সুফি। সুফিবাদি চেতনা ও আবহ সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে এ শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের আয়োজন। সুফিদের চর্চিত শুদ্ধচারি আল্লাহমুখী চেতনার বিস্তার ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য।
সভাপতির বক্তব্যে শাহজাদা নঈমুল কুদ্দুস আকবরী বলেন, চট্টগ্রাম দেশের সাংস্কৃতিক চর্চার পাদপীঠ। শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আজ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি ও উৎকর্ষতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের প্রবর্তক খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দীন আলকাদেরী (রহ), এর রূপকার ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক আলহাজ সুফি মিজানুর রহমানের মুখ্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
এতে আলোচক ছিলেন জমিয়তুল ফালাহর সাবেক পেশ ইমাম মাওলানা নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী। মিশরের আল আজহারে আহলে বায়ত চর্চা বিষয়ে আলোচনা করেন ড. মাওলানা সাইফুল ইসলাম আজহারি। তিনি বলেন, শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের মূল দর্শন ও চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সেখানে বাতিল ইসলাম বিকৃতকারীদের কোনো স্থান নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয় নবী দুলালী হযরত ফাতেমা জাহরার (র) নামে প্রতিষ্ঠিত। আহলে বায়তের আদর্শে-প্রেমে ও এর ধারক হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আশুরার ফজিলত আলোচনায় মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, আশুরা দিবসেই জগতের সৃষ্টি। এ দিনেই পৃথিবীর বিনাশ ঘটবে। এ দিনে নানা ঘটনা দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। আশুরা দিবসটি তাই অতীব মহিমান্বিত ও মর্যাদাম-িত।
কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন, ভারত কাসওয়াসা দরবার শরীফের সৈয়দ মুহাম্মদ হাম্মাদ আশরাফ আল আশরাফি, হযরত আমানত শাহ (রহ.) দরগাহ্ শরীফের মুতাওয়াল্লী শাহজাদা শরফুদ্দীন মুহাম্মদ শাহীন, টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ঢাবির সাবেক প্রক্টর ও এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান, লেখক মোস্তাক আহমদ, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, চসিক প্যানেল মেয়র মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর মুহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল।
ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহফিলের প্রধান সমন্বয়কারী আলহাজ্ব মুহাম্মদ আলী হোসাইন সোহাগ, মুহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, মুহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ আব্দুল হাই মাসুম, মোহাম্মদ দিলশাদ আহমদ, এস এম সফি, মুহাম্মদ মনসুর সিকদার, মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, মাঈন উদ্দিন আহমদ মিঠু ও মুহাম্মদ শাহব উদ্দিন।
সালাত সালাম শেষে দেশ-জাতির শান্তি ও কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি এবং বিশে^র নির্যাতিত মানবতার মুক্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়।
আজ শুক্রবার ৬ষ্ঠ দিবস থেকে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স এর নিচতলায় পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন সুফি টিভিতে মাহফিলের লাইভ দেখানো হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি