সংলাপ কার সঙ্গে করব

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বরাবরের মতই তিনি সমসাময়িক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংলাপ কার সঙ্গে করব? আমি ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে নির্বাচন থেকে সরায়া তারপর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

‘১৫ আগস্ট আমার বাবা-মার হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাকে হত্যার চেষ্টা, বোমা রেখে হত্যার চেষ্টা..যারা করেছে আমি তাদের সাথেও বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে।’

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে সমবেদনা জানতে গিয়ে বিএনপিনেত্রীর বাসায় ঢুকতে না পারার ‘অপমানের’ কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছোটোছেলে মারা গেল, আমি গেলাম তাকে দেখতে বা একজন সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাতে, আমাকে কীভাবে অপমানটা করল? আমার গাড়ি ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দেবে না, বড় গেট বন্ধ।

‘টেলিফোন করে সময় নেওয়া হয়েছে যে, আমি ওই সময়ে আসব, তারপরেও সেই গাড়ি বন্ধ করল। আমি তখন অলরেডি চলে গেছি। বললাম, ঠিক আছে তাহলে ছোট গেট দিয়ে ঢুকব। আমার গাড়ি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ছোট গেট বন্ধ করে দিল।

‘তো, এত অপমানের পরে তাদের সাথে আবার কীসের বৈঠক? আমার পরিষ্কার কথা। যারা এটুকু ভদ্রতা জানে না, তাদের সাথে বৈঠকের আর কি আছে?’

উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ পারবেন আপনার বাবা-মার হত্যাকারীর সাথে বৈঠক করতে? আপনাকে যদি ওইভাবে অপমান করে, আপনি পারবেন? কে পারবে?

‘যেটুকু সহ্য করেছি, দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে না। এটাতো প্রমাণিত, বাংলাদেশের মানুষের জন্য। তারপর আবার এদের সাথে কিসের কথা বলব।’

খালেদা জিয়ার ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনরা এসে ‘আকুতি’ জানানোর কারণে সাজা স্থগিত করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপরেওতো, ঠিক আছে অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ, বোন এসে ভাই এসে বোনের জামাই সবাই এসে যখন আমার কাছে আর রেহানার কাছে এসে আকুতি করল, হ্যাঁ তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং চিকিৎসার সুযোগটা করে দিয়েছি। এইটুকু যে করেছি, সেটাই যথেষ্ঠ।

‘যারা বারবার আমাদেরকে হত্যা করে, আমাদের উপরে অপমান করে, সারা বাংলাদেশের কাকে না অপমান করেছে? তারপরেও যে এটুকু সহানুভূতি পাচ্ছে, সেটা আমার কারণে। ওদের সাথে আবার কিসের বৈঠক, কিসের কি? আর কী ক্ষমতা তাদের আছে? সন্ত্রাস করা ছাড়াতো কোনো ক্ষমতা নাই।’

‘এমন কোনো চাপ নাই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে’

বিদেশি শক্তির যে চাপই আসুক না কেন, জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সরকার তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এমন কোনো চাপ নাই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে, এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ; আর উপরে আল্লাহ আছে; আর আমার বাবার আশির্বাদের হাত আমার মাথায় আছে।

‘কাজেই, কে কি চাপ দিল, না দিল- এতে কিছু আমাদের আসে যায় না। জনগণের স্বার্থে যেটা করার আমরা সেটাই করব। জনগণের কল্যাণে যেই কাজ করার সেটাই করব।’

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি ছাপা হয়। ওই চিঠির সূত্র ধরে এক সাংবাদিক জানতে চান, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারপ্রধান কোনো আন্তর্জাতিক চাপ অনুভব করছেন কিনা বা আন্তর্জাতিক কোনো চাপ আছে কি-না।

প্রশ্ন শুনে হেসে ওঠেন শেখ হাসিনা। পরে কোনো চাপে নতি স্বীকার না করার বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এই রকম বহু চাপতো ছিল, পদ্মাসেতুর আগেতো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের একেবারে সেই অ্যাম্বাসেডর থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টেলিফোনের উপর টেলিফোন, হেনতেন…

কেন? একটা ভদ্রলোক একটি ব্যাংকে এমডি, তাকে এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু, তাতো আমি জানি না। আইনে আছে ৬০ বছর, হয়ে গেছে ৭০ বছর বয়স। তারপরেও এমডি পদে থাকতে হবে। একটাই হয় এমডি পদে থাকবে বোধহয় মানি লন্ডারিং করা যায়, এইতো সুবিধা। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই চাপও কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপর নিজের পয়সায় পদ্মা সেতু বানায়া তাদেরকে দেখালাম, ওই চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না। ঠিক আছে? আর কিছু লাগবে?’

ড. ইউনূসকে ‘হয়রানি’ না করার আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে বিশ্বের ৪০ ব্যক্তির নামে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে লেখা ওই খোলা চিঠিকে ‘অলীক ও বস্তুনিষ্ঠ নয়’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

৭ মার্চ প্রকাশিত ওই খোলা চিঠি দেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৪০ জন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

এ চিঠির লেখকদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, চাথাম হাউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্যার রবিন নিবলেট রয়েছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় এক পৃষ্ঠাজুড়ে বিজ্ঞাপন আকার দেওয়া ওই চিঠিতে ইউনূসের বিভিন্ন পুরস্কার ও কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, ‘গ্রামীণ টেলিকম বা গ্রামীণফোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হননি মুহাম্মদ ইউনূস। বরঞ্চ, নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে দারিদ্র-বিরোধী মিশনে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি এবং ঢাকায় সাদামাটা জীবনযাপন করেন।

এ কারণে এটা দেখা কষ্টকর যে, অনবদ্য সততার একজন ব্যক্তি অধ্যাপক ইউনূস ও তার জীবনকর্মকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং অব্যাহতভাবে হয়রানি ও আপনার সরকার দ্বারা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’

ওই খোলা চিঠির বিষয়ে আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা বিবৃতি তো না, এটা একটা বিজ্ঞাপন। এবং যে ৪০ জনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেটা আমাদের বিশেষ একজন ব্যক্তির পক্ষে, এটার কী (উত্তর) দেব জানি না, তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে।

‘আমার প্রশ্নটা হল, যিনি এত নামিদামি, নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত তার জন্য এই ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়। এটাই আমার প্রশ্ন আর কিছু না। যে, অ্যাড দিতে হল কেন?’

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ওই চিঠিতে আইনি ‘হয়রানির’ প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, টেকসই অগ্রগতির জন্য কীভাবে একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে পরিচর্যা করা যায়, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তার রোলমডেল হিসাবে পুনরায় আবির্ভূত হবে।

এক্ষেত্রে ভালো প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে অধ্যাপক ইউনূসের অর্জনের স্বীকৃতি এবং তিনি যেন কেবল নিজেকে রক্ষার জন্য না লড়ে আপনার দেশ ও বিশ্বের জন্য আরও ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে তার প্রাণশক্তি ব্যবহারের দিকে নজর দিতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়া।’

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা তার উত্তরে বলেন, ‘যে যাই হোক, আমার দেশে কতগুলি আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী সব কিছু চলবে এবং সেটা চলে। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করি, যারা ট্যাক্স ঠিকমত দেয় সেটার আলাদা বিভাগ আছে, ট্যাক্স আদায় করে।

‘কেউ যদি এখন এই সমস্ত বিষয়ে কোনো রকম আইনভঙ্গ করে বা শ্রমিকদের কোনো অধিকার কেড়ে নেয়, শ্রম আদালত আছে, সেটা দেখে। এই ক্ষেত্রে আমারতো কোনো কিছু করার নেই সরকার প্রধান হিসাবে।’

‘কাজেই এখানে আমাকেই বা কেন বলা হল? এর বাইরে আমি আর কী বলব? পদ্মা সেতু কিন্তু করে ফেলেছি, খালি এইটুকু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম,” স্মিতহাস্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে ‘উন্মুখ দেশি-বিদেশি এজেন্সি’
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অনেকগুলো এজেন্সি ‘উন্মুখ’ হয়ে আছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৪০ জনের নামে আসছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যাম্বিশন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নাই। যাদেরই ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে, নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু হয়, তার জন্য, আমি তো আগেই বলে দিলাম, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কী কী সংশোধনী এনেছি বা কীভাবে সংস্কার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের সন্ত্রাস-সংঘাত, ২০০৬ সালের ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা এবং ২০০৭ সালের মত নির্বাচন আয়োজনের পথ বন্ধ করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এখন জনগণের উপর নির্ভর করে, যে জনগণ কীভাবে চায়, আমাদের প্রস্তুতি সবসময় আছে যে, জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।

বিগত কয়েকটি উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ কি ভোট দিতে পারেনি? পেরেছে তো। নির্বিঘেœ তারা ভোট দিয়ে গেছে। এই ভোটগুলি নিয়েতো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। পেরেছে?

সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘœ হতে পারে, শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, অবাধ-নিরপেক্ষভাবে হতে পারে সেটাতো আমরা প্রমাণ করেছি। আর আমাদের কী প্রমাণ করতে হবে? আর কি প্রমাণ করতে হবে, সেটাতো আমার প্রশ্ন?’

‘নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি’
জনগণ যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেজন্যই সরকার নির্বাচন কমিশনকে ‘স্বাধীন করে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী পরিমাণ কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনই নেবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন, ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আগামী নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ হওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখানে মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ সরকারই নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন করে দিয়েছে। স্থিতিশীলতার জন্য যেটা দরকার নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়।

‘নির্বাচন কমিশন সবসময় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল। আমরা কিন্তু সেখান থেকেও তাদেরকে স্বাধীন করে দিয়েছি, বাজেটে তাদের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখান থেকে তারা খরচ করতে পারবে। তাদেরকে আর্থিক যে স্বাতন্ত্রতা সেটা কিন্তু আমরা দিয়ে দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ অবাধ, নিরপেক্ষ করেই আমরা গড়ে তুলেছি। এই কারণে জনগণ ভোটের অধিকার জনগণ প্রয়োগ করবে, জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে, সেটাতো আমাদেরই স্লোগান।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম করতে চেয়েছিলাম, কারণ সবাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দেবে, খুব দ্রুত রেজাল্ট পাবে, অনেকেরই আপত্তি, যখন সবাই এত আপত্তি, তখন ঠিকাছে, এটা নির্বাচন কমিশনের উপরে, যতটুকু তারা পারে করবে।

‘তবে, করতে পারলে ভালো হত আমি মনে করি। অন্তত মানুষ তার ভোটের অধিকারটা প্রয়োগ করতে পারত, একটা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারত। সেটা নিয়ে যেহেতু এতো আলোচনা-সমালোচনা, এটা আমরা আমাদের নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। কারণ এটার জন্য অনেক ধৈর্য্যের দরকার। অনেকে গালমন্দ, অনেক কিছুতো শুনতে হয়। প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনে যাচ্ছি।

আর আমরাই সুযোগ করে দিয়েছি। কারণ, বাংলাদেশতো এতো টেলিভিশনও ছিল না, রেডিও-ও ছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তাই সকলের সুবিধাও আছে কথা বলার। অবশ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, দেশ-বিদেশে থেকেও আমাদের সমালোচনা করে, সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের করে দেওয়া জিনিস দিয়ে সুযোগ পেয়ে সমালোচনা করে আবার এই কথাও শুনতে হয়, কিছুই করি নাই। এটাও শুনতে হচ্ছে।’

সমালোচনার মুখেও আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ-কর্তব্যবোধ নিয়ে এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। সক্ষম হয়েছি এ কারণে, জনগণই হচ্ছে আমাদের মূল শক্তি, জনগণ আমাদের পাশে ছিল সেজন্য।’

এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও সেটা দূর করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যেও যখন কোভিড-১৯ দেখা দিল, একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকের ছিল যে, এটা আমরা করতে পারব কি-না বা এটা এখন আমাদের গ্রহণ করা সম্ভব কি-না, আমি কিন্তু সেখানে বলেছি, না, আমরা পারব।

‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাস হয়েছে, কাজেই আমরা সেই সুযোগটা নিয়েছি। এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা, আমরা এগিয়ে যাব। এরই মাঝে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে, ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি বিশ্বাস করি, এটা কেউ কিছু করতে পারবে না। হয়ত সাময়িক কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু মোকাবেলা করবে আমাদের জনগণই।’

আন্দোলন-সংগ্রামে বা রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সবগুলো আওয়ামী লীগ রক্ষা করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের উপরে উঠেছিল।

আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। করোনাকালীন এই দুই বছর আর যুদ্ধকালীন সময়টা যদি না থাকত আরও অন্তত ২-৩% দারিদ্র্য আমরা কমিয়ে আনতে পারতাম। নানা কারণে হয়ত এটা হয়নি। কিন্তু এখানে থেমে থাকলেতো হবে না, হতাশ হবারও কিছু নাই। অন্তত আমি কখনো হতাশ হই না। আমার একটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি।’

রোজায় বেশি কিনে ঘরে মজুদ করবেন না
রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, ‘জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি’। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে।

‘আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সাথে কিছু আছে, মজুদকারী, তারা মজুদ করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়ালো, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুললো।

সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘এগুলো তো হবেই, এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি।’
রমজান মাসে চালের কোনো অভাব হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমাদের মজুদ আছে। এক কোটি পরিবারকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডাল, তেল, চিনি এগুলো তারা কিনতে পারছে। এখন ছোলাও তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

‘আর তার থেকে আরেকটু কম আয়ের যারা, প্রথমে ৫০ লক্ষ ধরেছিলাম, প্রয়োজনে এক কোটি লোক যদি পাওয়া যায়, তাদেরকেও আমরা ওই কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো, মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে কিনতে পারবে।’

আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম না, মানে কাজ করতে পারনে না, আমরা তো ভিজিডি ভিজিএফের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। এভাবে কোনো স্তরের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।’

সবাই সহযোগিতা করলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আশ্বস্ত করেন সরকারপ্রধান।