সুপ্রভাত ডেস্ক »
পেসার তাসকিন আহমেদ না থাকায় তাইজুলকে নেওয়া হয়েছিল একাদশে। তার প্রতিদানও দিলেন বামহাতি স্পিনার। এক তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিই পুরোটা দিন পরীক্ষায় ফেলেছে স্বাগতিকদের। তবে শেষ বিকালে বাভুমা-রিকেলটন জুটি প্রোটিয়াদের আশান্বিত করেছিল। তবে শেষ বিকালে বাংলাদেশের বোলিং নৈপুণ্য তাদের বড় স্কোরের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে। পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৯০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭৮ রান। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
দ্বিতীয় টেস্টে ফিল্ডিংয়ে নেমে বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ শুরু করেছিল স্পিন দিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এলেও সুবিধা করতে পারেননি। টস জিতে প্রোটিয়া ব্যাটাররা আসলে কোনও সুযোগই দিচ্ছিলেন না ব্যাটিংয়ে।
তাইজুল ইসলামকে যা একটু সমীহ করেছেন এলগাররা। বাকি সবার ওপর দিয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। লাঞ্চের আগে বোলিংয়েও ছিল না কোনও ধার। ছন্দহীন বোলিংয়ে খুব একটা পরীক্ষাও নিতে পারেননি খালেদ-এবাদতরা।
প্রথম সেশনে একমাত্র উইকেট হিসেবে আউট হয়েছেন সারেল এরউই। আসলে তৃতীয় ওভারেই আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু আপসোসে পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। রিভিউ না নেওয়ায় উইকেট পাওয়া হয়নি। বোলার খালেদ ছিলেন ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। রিভিউ নিতে বারবার ‘অনুরোধ’ করছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হককে। বাংলাদেশ অধিনায়ক বোলারের কথায় খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারলেন না। তাই উইকেটকিপার লিটন দাসের ইশারার অপেক্ষায় থাকলেন। সেখান থেকেও আসেনি জোরালো কিছু। দোটানায় থাকা মুমিনুল সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। শেষমেশ যখন রিভিউয়ের সংকেত দিতে যাচ্ছিলেন, ততক্ষণে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ জানানোর সময় শেষ হয়ে গেছে। ফলে রিভিউ আর নেওয়া হয়নি। হকআইয়ে দেখা গেছে, ব্যাটে না লাগা বল সরাসরি আঘাত করে স্টাম্পে। ফলে রিভিউ নিলে শুরুতেই উইকেট আসতো বাংলাদেশের ঘরে।
পরে ওই খালেদই ফিরিয়েছেন এরউইকে। যে উইকেট আসতো তৃতীয় ওভারে সেটা আসে ১২তম ওভারে। উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি করে প্রোটিয়া ওপেনারকে তিনি ফিরিয়েছেন ২৪ রানে। ৪০ বলের ইনিংসে এরউই মেরেছেন ৪ বাউন্ডারি।
বিপরীতে আগের দুই ইনিংসের মতো পোর্ট এলিজাবেথেও আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করেন এলগার। ৬৬ বলে পূরণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফসেঞ্চুরি। অবশেষে তাকে ফেরানো গেছে লাঞ্চ বিরতির পর। তাইজুলের ভেল্কিতে কাটা পড়েন তিনি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে প্রোটিয়া অধিনায়ক ধরা পড়েন উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে।
ফেরার আগে চলমান সিরিজে টানা তৃতীয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন এলগার। এবার ৭০ রানে আউট তিনি। ৮৯ বলের ইনিংসটি এলগার সাজান ১০ বাউন্ডারিতে। পাশাপাশি শেষ ৬ ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম ফিফটি প্লাস স্কোরের দেখা পেয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
এলগারকে ফেরানোর বেশ কিছুক্ষণ পর নেমেছিল বৃষ্টিও। ২৫ মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকার পর শুরু হয় দ্বিতীয় সেশনের বাকি খেলা। তাতে প্রোটিয়াদের রানের রাশ টেনে ধরার সুযোগ পায় সফরকারী দল। তবে বাভুমা-পিটারসেন জুটি প্রতিরোধ গড়েই খেলতে থাকে। ৫১ রান যোগ করে ভালো কিছুর বার্তা দিচ্ছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের এই প্রতিরোধ ভেঙে যায় তাইজুলের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে। দ্বিতীয় সেশনের প্রায় শেষভাগে এসে পিটারসেনের প্রতিরোধ ভেঙেছেন তাইজুল।
তার গুড লেংথের ডেলিভারিতে বল প্যাডে লাগলে লেগ বিফোরের আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার আউট দেননি শুরুতে। মুমিনুল এবার বিলম্ব না করে রিভিউ নিলে সাফল্য পেয়ে যান সঙ্গে সঙ্গে। তাতে ১২৪ বলে ৬৪ রান করা পিটারসেনকে ফিরতে হয়েছে হতাশায় মাথা নুয়ে। চতুর্থ হাফসেঞ্চুরির দেখা পাওয়া এই ব্যাটারের ইনিংসে ছিল ৯টি চার।
তারপর তৃতীয় সেশনের প্রায় পুরোটা সময় শাসন করে তেম্মা বাভুমা-রায়ান রিকেলটন জুটি। ৮১ রান যোগ করা এই জুটিও বেশি বড় হতে দেননি তাইজুল। দুবার প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত হানা এই বামহাতি স্পিনার এবার ফেরান রিকেলটনকে।
৮২তম ওভারে তাইজুলের ঘূর্ণিতে রিভার্স সুইপ খেলতে যান রিকেটন। বল গ্লাভসের একটু ওপরে লেগে জমা পড়ে স্লিপে থাকা ইয়াসির আলীর হাতে। বাংলাদেশ ক্যাচের আবেদন করলেও অনফিল্ড আম্পায়ার সাড়া দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে মেলে সাফল্য। ক্যাচ আউট হওয়া রিকেলটন ৮২ বলে ফিরেছেন ৪২ রানে। পোক্ত হওয়া জুটি ভাঙার পর শেষ বিকালে বাভুমাকেও খালেদ তালুবন্দি করালে দিনটা পুরোপুরি নিজেদের করে নিতে পারেনি প্রোটিয়ারা।
১৬২ বল খেলা বাভুমা ৬৭ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। অবশ্য এই আউট নিয়েও রিভিউ চলে কিছুক্ষণ। নাজমুল ঠিকমতো ক্যাচটি নিয়েছেন কিনা সেটি নিয়ে সংশয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত আউট দেন টিভি আম্পায়ার। অথচ দুজনের ব্যাটিং যতটা স্বস্তি দিচ্ছিল। সেই দুই ব্যাটার ফিরে যাওয়ায় মুখে চওড়া হাসি থাকার কথা নয় স্বাগতিকদের।
প্রায় পুরোটা সময় নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে যাওয়া বামহাতি স্পিনার তাইজুল ৭৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। করেছেন ৩২ ওভার। ২০ ওভার বল করে পেসার খালেদ আহমেদ ৫৯ রানে নিয়েছেন ২টি।