আবদুল মান্নান »
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরের এক নিভৃত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। পূর্ব পুরুষ সুদূর ইরাক হতে এই দেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন প্রায় চারশত বছর আগে। তাদের পদবি ছিল শেখ। মা বাবার কাছে শেখ মুজিব হলেন ‘খোকা’। বাড়ির বড় ছেলে বলে আদরটা একটু বেশি। বাবা স্বপ্ন দেখতেন তাদের আদরের খোকা একদিন বড় হয়ে বড় আইনজীবী হবে। ইচ্ছা করলে বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারিও পড়তে পারেন। কিন্তু খোকারতো জন্ম হয়েছে এই দেশের নির্যাতিত মানুষের সেবা করার জন্য। সেই খোকা একদিন হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু, বাংলার বন্ধু, বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বেঁচে থাকলে এই ১৭ই মার্চ তিনি একশত বছর পূর্ণ করতেন।
১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট ঘাতকরা যখন তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে তখন তাঁর বয়স পঞ্চান্ন বছর। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশটাকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে তিনি দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ঘাতকরা তা চায়নি। তারা চেয়েছিল এমন বাংলাদেশ মানুষের কছে যার স্বাধীনতা হবে অর্থহীন আর মানুষ বলবে পাকিস্তান ছিলামতো ভালই ছিলাম। সেই তাঁকে হত্যা করার পর শেখ মুজিব হয়ে উঠেছেন এক মৃত্যুহীন প্রাণ, শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এখন একই সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটা অনেকটা অসম্পূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা।
ছোট হতেই শেখ মুজিব সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এসেছেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এলাকাটা ছিল অনেকটা হিন্দুপ্রধান এলাকা। আর এই হিন্দুদের একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায় মতুয়া সম্প্রদায়ের বা একেবারেই নি¤œবর্ণের। শেখ মুজিবের প্রথম স্কুল গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে পড়ার সময় তিনি খেয়াল করেন যে ক্লাসের প্রথম সারির বেঞ্চে শুধু মাত্র উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা বসতে পারেন। এর প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি একদিন নিজেই এই প্রথা ভেঙে প্রথম সারিতে বসা শুরু করে দিলেন। ক্লাস শিক্ষক এটি দেখেও না দেখার ভান করেন কারণ তিনি জানতেন শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে পরিণাম ভালো নাও হতে পারে কারণ শেখ পরিবার টুঙ্গিপাড়ায় বেশ সম্মানিত।
স্কুলের পাঠ শেষ করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হলেন। টুঙ্গিপাড়ায় থাকতেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ভক্ত ও অনুসারী। তাঁর গুণাবলির কারণেই তিনি কলকাতা গিয়ে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে সেই কলেজের অনেকটা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হতে পেরেছিলেন। তবে তরুণ মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় মেলে ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় ও ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার সময়। তরুণ মুজিব তাঁর অনুসারীদের নিয়ে বাংলার কলকাতা ছাড়াও অন্যান্য দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাতে চেষ্টা করেছেন। আবার দাঙ্গার সময় জাতিÑধর্মÑনির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন। তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দি, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, আবুল হাসিম প্রমুখদের সাথে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নেন এই বিশ্বাসে যে মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠিত হলে শুধু মুসলমানরাই নয়, সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়া বংলার আপামর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ইংরেজ ও হিন্দু সামন্ত প্রভুদের দ্বারা শোষিত হয়ে এসেছে ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামের একটা অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্ম হলো। মাঝখানে হাজার মাইলের ভারত বা হিন্দুস্থান। দুই অংশের মধ্যে কোন কিছুরই মিল নেই। বলা হলো ইসলাম ধর্মই হবে দুই অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধন যদিও যে অংশটি পশ্চিম পাকিস্তান সেই অংশে নানা সম্প্রদায় কেউ শিয়া তো আবার কেউ সুন্নি। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা বলে যিনি পরিচিত তিনি ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের লোক যাদের আবার অন্য সম্প্রদায়ের মুসলমানরা মুসলমান বলতে নারাজ। তার উপর আছে কাদিয়ানি, দাউদি বোরাহ ইত্যাদি। এই সব সমস্যা পূর্ব বাংলায় কখনো ছিল না। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার কয়েক বছর আগে হতেই কিছু ফেরেববাজ মুসলিম লীগ নেতা বলা শুরু করলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু যা পাকিস্তানের মাত্র ছয় ভাগ মানুষের ভাষা। আর বাংলা পাকিস্তানের ছাপ্পান্ন ভাগ মানুষের ভাষা। জিন্নাহ নিজে উর্দু জানতেন না কিন্তু তাঁকে বুঝানো হয়েছিল উর্দু মুসলমানদের ভাষা যা মোটেই সত্য নয়। ধর্মের কোন ভাষা থাকে না। জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকা এসে ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। যে ক’জন জিন্নাহর এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়–য়া তরুণ শেখ মুজিবও ছিলেন। শুরু হলো বাঙালির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। সামনের কাতারে থেকে অন্যদের সাথে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেন শেখ মুজিব। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বাঙালিরা যখনই তাদের কোন ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন করেছে সেখানে তারা ভারতীয় হিন্দুদের ষড়যন্ত্র দেখেছে। অথচ বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন এই আন্দোলনের শুরুর দিকে যতজন ছাত্র গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কেউই হিন্দু ছিলেন না।
একটি স্বাধীন দেশ পরিচালিত হয় তার সংবিধান দ্বারা। পাকিস্তানের সামরিক বেসামরিক আমলাদের ষড়যন্ত্রে দেশটির প্রথম গণপরিষদ সেই সংবিধান প্রণয়ন করেও তার বাস্তবায়ন করার আগে পাকিস্তানের গভর্নর জেনরেল গোলাম মোহাম্মদ সেই গণপরিষদ ভেঙে দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাকিস্তানের উভয় অংশ হতে চল্লিশ জন সদস্য নিয়ে আর একটি নূতন গণপরিষদ গঠন করা হয় । ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে হতে পূর্ব বাংলার চল্লিশজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়, তাদের মধ্যে শেখ মুজিবও ছিলেন। তিনি তখন ছিলেন জেলে।
শেখ মুুজিব কারাগার হতে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান গণপরিষদে অংশগ্রহণ করেন। গণপরিষদের প্রত্যেকটি অধিবেশনেই শেখ মুজিব যে ক’টি বিষয় নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তার মধ্যে ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে বাংলা, পূর্ব বাংলাসহ পাকিস্তানের প্রদেশগুলোর স্বায়ত্তশাসন ও সরকারি চাকুরিতে প্রদেশগুলোর জনসংখ্যা ভিত্তিক নিয়োগ। এর আেেগ নির্ধারিত হয়েছিল পাকিস্তানের দুটি অংশ হবে দুটি ইউনিট যার অর্থ হচ্ছে পূর্ব বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বাস হলেও তার অবস্থান হবে পশ্চিম পাকিস্তানের সমান। এর অর্থ হচ্ছে পূর্ব বাংলায় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বাস তা অস্বীকার করা। পাকিস্তানের হবে দুটি ইউনিট এবং এই দুই ইউনিটেই সব কিছুতেই সমান সুযোগ সুবিধা পাবে । এখানে জনসংখ্যাকে গৌণ করে দেয়া হলো । তিনি পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখারও তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি এই গণপরিষদে পূর্ব বাংলার স্বার্থ নিয়ে অনেকটা একাই লড়াই করেছিলেন। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার আদায় করা যাবে না।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ দেশটির প্রথম সংবিধান প্রণয়ন করে এবং ঘোষণা করে তার অধীনে ১৯৫৮ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক বেসামরিক আমলারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার মানবেন কেন? তা যদি হয় তা হলে তাদের আধিপত্যতো খর্ব হবে । ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন, সংবিধান বাতিল করে শেখ মুজিবসহ দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করেন। ঠিক দু’সপ্তাহের মাথায় ২৭ অক্টোবর মির্জাকে সরিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আইউব খান ক্ষমতা দখল করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানে গণতন্ত্র ধ্বংস করার নূতন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যায়। সেই যে পাকিস্তান হতে গণতন্ত্র নির্বাসিত হলো এখন পর্যন্ত তা আর ফিরে আসেনি ।
আইয়ুব খান তার ডায়রিতে শেখ মুজিবকে একজন বিপদজনক মানুষ ও আপদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং মনে করতেন মুজিব তাঁর জনগণকে প্রতারিত করছে। (উরধৎরবং ড়ভ ঋরবষফ গধৎংযধষ গড়যধসধহহধফ অুঁন কযধহ. ১৯৬৬-১৯৭২. চধমব ৮৮) । আইউব খান দশ বছর দেশ শাসন করেছেন যার বেশির ভাগ সময় শেখ মুজিব জেলে কাটিয়েছেন। জেল হতে বের হয়ে এক পর্যায়ে শেখ মুজিব বাঙালির মুক্তিসনদ নামে খ্যাত ছয় দফা ঘোষণা করেন ১৯৬৬ সালে। এই সময় শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছয় দফার বিভিন্ন দিক নিয়ে মানুষকে বুঝাতে সভা সমাবেশ করে বেড়ান । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৯৬৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আইয়ুব খান পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করার অভিযোগে তথাকথিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ রুজু করেন। ছাত্রদের গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আইউব খান সেই মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চ আইউব খানকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনা প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ঘোষণা করেন এক ব্যক্তি এক ভোট এই ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার হতে মুক্তি লাভ করার পরদিন আইউব বিরোধী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। তখন হতে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন বাঙালির মহানায়ক, যেন হ্যামিলনের বংশীবাদক। মনে হচ্ছিল তিনিই বাংলাদেশ।
১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার জন্য সংরক্ষিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে পাকিস্তানে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু বাঙালি আবারও শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার। ক্ষমতা যেন বাঙালিদের হাতে না যায় তার জন্য এবার ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে সামিল হয় নির্বাচনে দ্বিতীয় হওয়া পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা য়ড়যন্ত্রে পটু জুলফিকার আলী ভুট্টো। নানা রঙে, নানা ঢঙে সেই ষড়যন্ত্র চললো ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৬ মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্সে তাঁর সেই ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ দিলেন যাতে তিনি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না। তিনি জনগণের অধিকার চান। শেষ করলেন এই বলে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে। সেই বিকেলে রমনা রেস কোর্স মাঠে রচিত হয়েছিল রাজনীতির এক অমর কবিতা যা আজ জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত।
২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার পুরো সামরিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। শুরু হলো নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসভবন হতে সেনা সদস্যরা আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আবার শুরু হয়েছিল আর একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। রায় অনেকটা পূর্ব নির্ধারিত, মৃত্যুদ-। এদিকে বাংলার দামাল ছেলেরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাংলার মাঠে ঘাটে যুদ্ধ করছে। তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ভারতের জনগণ আর তার সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর কিছু আরব দেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সকল দেশের জনমত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭২ সালে ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে কারাগার হতে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি দেশে ফেরেন ১০ জানুয়ারি।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের তেইশ বছরে ৪,৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। যেই স্বাধীন দেশের জন্য তিনি দুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন সেই দেশে তিনি বেঁচে ছিলেন ১,৩১৪ দিন বা সাড়ে তিন বছর। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারা সকলেই তাঁর একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন, বলতে গেলে ঘরের মানুষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া তাঁর নাম নেওয়াটাও আইন করে নিষিদ্ধ করে দেন। দীর্ঘ একুশ বছর পর তাঁরই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে পিতার আরব্ধ কাজ শেষ করা শুরু করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তাঁর কর্মে ছেদ পড়ে। ২০০৯ সাল হতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন। বদলে দিয়েছেন তিনি বাংলাদেশকে। বিশ্বে বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের এক রোল মডেল আর শেখ হাসিনা একজন স্বীকৃত রাষ্ট্রনায়ক।
দেশ যখন তার স্বধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দ্বারপ্রান্তে তখন দেশটির স্থপতি আজ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর অবর্তমানে যখন বাংলাদেশ তাঁর জন্মের শতবর্ষ পালন করছে ঠিক তখনই শুরু হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখি ষড়যন্ত্র যাতে পুরানোদের সাথে ঘরের মানুষের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। পিতা আপনি যেখানেই থাকুন, এই বাংলার সতের কোটি মানুষের জন্য আপনি আশীর্বাদ হয়ে থাকুন যেমনটি আপনার জীবদ্দশায় ছিলেন। তখনও আপনি বাঙালির মাথার ওপর ছায়া দেয়া বটবৃক্ষ ছিলেন, এখনো তাই আছেন। আপনার স্মৃতির প্রতি আবারো বিন¤্র শ্রদ্ধা। আপনার আশীর্বাদে আর আপনার কন্যার নেতৃত্বে বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক।
জয় বাংলা।
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক