নিজস্ব প্রতিবেদক »
শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘পাঠ্যবই মুখস্থ করে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছে। কিন্ত বৈশ্বিক উদ্ভাবনের সূচকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। প্রথমত ভাষাগত দক্ষতার একটা সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর একটা বিষয় শিখছে, মুখস্থ করছে কিন্ত বুঝার সক্ষমতা নেই। পরীক্ষায় ভালো করছে কিন্ত রপ্ত করার বিষয়টি নেই। যার ফলে দেশে পিএইচডি প্রাপ্ত সংখ্যা বাড়লেও উদ্ভাবক বাড়ছে না। তারা বেশিরভাগ টেক্সট বই মুখস্থ করে উত্তীর্ণ হচ্ছেন।’
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্স স্কিমের আওতায় ‘পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র চট্টগ্রাম বিভাগের ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায়’ তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের বড় জনগোষ্ঠী স্বাক্ষরতা পর্যায়ে এসেছে। প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে পারছে। এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের নানা বিষয় পড়িয়ে আমরা তাদের চিন্তা জগৎকে উন্মুক্ত করতে চাই। তারা যাতে উদ্ভাবক হয়ে উঠে। আমাদের পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে উদ্ভাবক গড়ে তোলা। যেটা আমরা বলছি স্মার্ট সিটিজেন, আর এটা তখনই হবে যখন শিক্ষার্থীদের ভিন্নœ কিছু করার ইচ্ছে জাগবে। আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের এই প্রবণতা নেই। তবে এই সমস্যা স্থায়ী হতে দিবোনা আমরা। আমাদের শিক্ষার্থীদের স্মার্টসিটিজেন হিসেবে গড়ে তুলবো। বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু পড়তে হবে, শিখতে হবে, জানার আগ্রহ থাকতে হবে। সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু করেছে তাতে অভ্যস্ত হতে হলে আগে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির অর্ন্তভুক্ত বইগুলো পড়তে হবে।
প্রধান বক্তা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী বলেন, ‘আমরা অনেকে মনে করছি ডিজিটাল ডিভাইস ফেইসবুক সর্বনাশের একটি বিরাট কারণ। এখানে দীর্ঘ সময় ব্যয় করছে শিক্ষার্থীরা। বই পড়ার অভ্যাস , জানার আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অতিদ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে পড়তে হবে বই।’
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘ ‘নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কমছে। তার জায়গা নিয়েছে মোবাইল ফোন। বইকেই এখন ফোনের মধ্যে আনার প্রক্রিয়া করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উপযোগী বিভিন্ন বই পিডিএফ ফাইল করে রাখতে হবে। যাতে করে ফোনেই সেই বই পড়ে ফেলতে পারে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি নির্মাণ এবং সেখানে সপ্তাহে একবার হলেও শিক্ষার্থীদের বই পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু শিক্ষার্থী নয় অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি বই পড়ার দক্ষতার মাধ্যমে তৈরি হয়। তার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ১ থেকে ২ হাজার বইয়ের একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি করা হয়েছে। যেখানে ইন্টারনেট ছাড়াও বই পড়া যাবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র শিক্ষা উপদেষ্টা ড. মো. মাহামুদ-উল-হক, স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিমের উপ-পরিচালক ড. আছিছুল আহছান কবীর।