কয়লা না থাকায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন গতকাল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট মিলে উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্র দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় গত ২৫ মে কেন্দ্রের একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়। কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সে হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। আগে এক দিনের জন্যও বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। ফলে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না।
দেশে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে সারা দেশে বেড়ে গিয়েছে লোডশেডিং। শহরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি মফস্বল এলাকায় ১২-১৪ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।
দেশে নজিরবিহীন প্রায় ২,৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে, যা নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের সমান।
বিদ্যুৎ সংকটের কারণটা সোজাসাপটা। গ্যাস ও কয়লা আমদানির জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই। ফলে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যেখানে ২৪,১৪৩ মেগাওয়াট, সেখানে এই সক্ষমতার অর্ধেকের চেয়ে কিছু বেশি উৎপাদিত হচ্ছে।
মোট ১৭০টি বিদ্যুৎ ইউনিটের মধ্যে শনিবার পূর্ণ সক্ষমতায় চলেছে মাত্র ৪৮টি, ৭৫টি চলেছে অর্ধেক সক্ষমতায় এবং ৪৭টি ইউনিট অলস বসে আছে। অলস বসিয়ে রাখা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এছাড়া এই কেন্দ্রগুলো স্থাপনেও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। এ কারণে এর আর্থিক প্রভাব বিশাল।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল ফার্নেস অয়েল। এসব জ্বালানির বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ জ্বালানি চাহিদার প্রয়োজন পড়ছে, তার বার্ষিক আমদানি ব্যয় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। বিপুল পরিমাণ এ জ্বালানি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। আগামী ২০২৭ সাল নাগাদ নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে বিদ্যমান জ্বালানির বাজারদর বিবেচনায় বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি দরকার হবে।
দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ডলারের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগকে। নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে জ্বালানি আমদানি বাবদ যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তার সংস্থান নিয়ে রয়েছে সংশয়।
দেশে যে পরিকল্পনা থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে বিপুল অংকের জ্বালানি আমদানি করতে হবে। তবে সেই তুলনায় জ্বালানির বিষয়টিকে গুরুত্ব কম দেয়া হয়েছে। জ্বালানি সংকটে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ভুগছে। আমদানিনির্ভর জ্বালানির জন্য বরাদ্দ ও বিনিয়োগের সংস্থান করতে হবে। তাহলে হয়তো একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসা যাবে।
দেশের অর্থনীতির চাকাকে স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে যে করেই হোক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব রকমের কাঁচামাল আমদানির ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
লোডশেডিং কবলিত দেশ
জ্বালানি সংকট নিরসনে জরুরি ব্যবস্থা নিন