নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের উখিয়ায় র্যাব অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’র স্লিপার সেল ও ওলামা বডির তিন শীর্ষ কমান্ডারকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মৌলভী হামিদ হোসেন প্রকাশ ওরফে ডাক্তার হামিদ, অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ ওরফে সোনা মিয়া ও ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি।
রোববার রাতে র্যাবের একটি আভিযানিক দল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় উখিয়ার ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার র্যাব কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি বলেন, হামিদ গ্রাম্য ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তার বাবাও একজন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। এ পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে ওলামা বডির প্রধান সালমান মুরব্বীর অন্যতম সহযোগী হয়ে ওঠে। ওলামা বডির কার্যকরী সদস্য হন। এ সময় তিনি আরসা’র নতুন সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সালমান মুরব্বী গ্রেফতার হওয়ার পর হামিদ তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ওলামা বডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং তার নেতৃত্বে তিনি স্লিপার সেল গঠন করে। তিনি ক্যাম্পে অবস্থানরত যুবক ও শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে আরসায় যোগদানের জন্য কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচিত কর্মীদের বিভিন্ন তথ্যাদি যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে আরসায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতো এবং তাদের ভরণপোষণও চালাতো। তিনি ৬০ জন নতুন সদস্য যুক্ত করেছে আরসায়।
র্যাব-১৫ অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতারকৃত আরসার প্রধান অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া প্রকাশ সোনালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৫, ৬, ৭ এর কমান্ডার আব্দুল হালিমের মাধ্যমে আরসার সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে। সে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক নোমান চৌধুরী গ্রেফতারের পর আরসার অর্থ সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। এছাড়াও বৈদেশিক অনুদানসহ আরসার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬ এবং ৭ নম্বর ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে ৩৮টি দোকান স্থাপন করে ভাড়া দেন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন বাজারে দোকান থেকে প্রতিমাসে চাঁদা উত্তোলন করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আটক আরসার ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনির তথ্য-প্রযুক্তি এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকায় তথ্য-প্রযুক্তির বিষয় দেখভাল করতো। এ সুযোগে সে ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য আরসা’র শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করতো। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতির খবরাখবর পৌঁছাতো। তাছাড়া বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি নজরদারিতে রাখতো। কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করতো। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।