কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার বিরান দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১০ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ইতোমধ্যে ভাসানচরে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। সরকার বলছে, রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য সব ব্যবস্থাই ভাসান চড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে গেলে কক্সবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্প জীবনের চেয়ে ভালো থাকবে তারা। তবে সাগরের ভেতরে জনমানবহীন ওই চরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে।
উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি এমন পরিবারগুলোরই শুধু নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তার আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উখিয়া টেকনাফ থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গার একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সকালে কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে ভাসানচর গমন করে। প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবারে ক্যাম্পে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের ধারাবাহিকতায় নির্যাতিত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে। তবে এসব রোহিঙ্গার সংখ্যা আরো বেশি- এমন অভিমত স্থানীয় অভিজ্ঞজনদের। সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা এসব রোহিঙ্গার ত্রাণসামগ্রী, স্যানিটেশন, পয়নিষ্কাশন, ওষুধ সামগ্রীসহ যাবতীয় খাদ্য ও নিত্যপণ্য সরবরাহ করে আসলেও নির্দিষ্ট একটি স্থানে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সময় বসবাস করার কারণে স্থানীয়দের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পে বেশ কয়েকদফা সংঘর্ষ মারামারি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের জিম্মি অবস্থায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের আপাতত ভাসানচরে স্থানান্তর করা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরেজমিন ভাসানচর আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সেখানকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানবেন। প্রতিনিধি দলের কাছে ভাসানচরের পরিস্থিতি জেনে রোহিঙ্গারা যেতে আগ্রহী হবেন বলে আশা করেন অনেকে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। স্থানীয় জনগণ চায় রোহিঙ্গাদের এখনই সে জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর। এ অবস্থায় অন্তত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকেও যদি ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া যায় তাতে উখিয়াÑটেকনাফের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমতো। এখন প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করে তুলে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে কোনো বেসরকারি সংস্থা বা বিদেশি কোনো শক্তি যেন তাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় বা রোহিঙ্গাদের ভুল না বোঝাতে পারে সেদিকে সরকারকে লক্ষ রাখতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়