মিয়ানমার রাষ্ট্রের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে বাধ্য হয়ে বসবাস করছে। ২০১৭ সালের পর সাত লাখের মতো এবং তারও আগের প্রায় ৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা সে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশের বোঝা হলেও বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের দেখভাল করে যাচ্ছে। মিয়ানমার চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে হত্যা নির্যাতন নারীধর্ষণ শিশুহত্যা বসতভূমিতে অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত বা অন্যান্য বৈচিত্র্য স্বীকার করে নিয়ে বিশ্বের আধুনিক রাষ্ট্রগুলো তাদের সংবিধান প্রণয়ন ও সেই মতে মানবাধিকার নিশ্চিত করলেও মায়ানমার এক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র হিশেবেই নিজের কালো মুখটি বাড়িয়ে রেখেছে যেন। এই ধরনের পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশটিতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বলে কোনো কিছুর বালাই নেই আর। সামরিক জান্তা ও তাদের চ-নীতির যাঁতাকলে সেখানকার রোহিঙ্গা নাগরিকেরা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরাও সমানে পিষ্ট হচ্ছে সেখানে। বাক-ব্যক্তি ও বিবেকের স্বাধীনতার কবর রচনা করে জান্তা সরকার সেখানে এখন একনায়কতন্ত্র কয়েম করেছে। আর তাদের এই মধ্যযুগীয় বর্বর শাসনক্রিয়াকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে বিশ্বের কয়েকটি মোড়ল রাষ্ট্র তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখার কুৎসিত অভিপ্রায়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার বিপুল জনসংখ্যার ভার বহন করেও উদারতার যে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে অতীব স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ এই দুর্ভার সমস্যা থেকে মুক্তির পথ অন্বেষায় তার সমস্ত কূটনৈতিক সামর্থ্য প্রয়োগেও কার্পণ্য করছে না। নানাদিকের তৎপরতা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ চাচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যাটির একটি সন্তোষজনক ও আনন্দদায়ক সমাধান।
সম্প্রতি এ লক্ষে একটি সংবাদে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তা হলো : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের বিচার এবং তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনে গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। গত সোমবার মানবাধিকার পরিষদে এই প্রস্তাব পাসের খবর জানিয়ে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, ২০১৭ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের পর এই প্রথম কোনো প্রস্তাব বিনা ভোটে জাতিসংঘে গৃহীত হলো। এ প্রস্তাবটির বিষয়ে জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় মাইলফলক। উল্লেখ্য, জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পাস হয়। বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সব রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উপস্থাপিত হয়েছিল। পাস হওয়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সর্বপ্রকার নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মতামত সম্পাদকীয়