রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। সর্বশেষ একই দিনে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪ রোহিঙ্গা নিহত ও দুই রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার ১৫ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করা হয়। এর আগে একইদিন দুপুরে আরেকজন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতে আরসা সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় তারা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
দেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শুরু থেকে ধারণা করা হয়েছিল এরা বাংলাদেশের জন্য একসময় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এখন হয়েছেও তাই।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় এখন বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় হলেও কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে চান না। কারণ তাতে চিহ্নিত হওয়ার ভয় আছে। এতে করে জীবনহানি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। দেখা গেছে যারাই এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছে এবং প্রশাসন-গোয়েন্দাকে তথ্য দিয়েছে বলে সন্দেহ হয়েছে, তারাই পরবর্তীতে এসব গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় বর্তমানে ১০টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ও সংঘর্ষের ঘটনা নৈমিত্তিক হয়ে উঠছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় নিরাপত্তার কাজ তদারকি করে এমন বাহিনীর এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতর অনেকগুলো গ্রুপ রয়েছে। তারা একে অন্যকে হটিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে, নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। কারণ ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে থাকবে, মাদক ব্যবসা, পাচার, অপহরণ সব কিছু তারা করতে পারবে। এই কারণেই এখন যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করেই এগুলো বেশি ঘটছে।‘
রোহিঙ্গা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আর রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এর বাইরে নবী হোসেন গ্রুপ, মুন্না গ্রুপ, ডাকাত হাকিম গ্রুপ, ডাকাত সালেহ গ্রুপ, ইসলামিক মাহাস গ্রুপ রয়েছে। আরসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত।
সামনে দেশে সাধারণ নির্বাচন। অনেকের ধারণা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করতে পারে কিছু গোষ্ঠী। এ বিষয়ে এখন থেকে তৎপর না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশের সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সংঘাত চলছে। কাজেই এ সময়ে সীমান্ত পথে আবার যেন মিয়ানমারের কোনো নাগরিক ঢুকে যেতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ