সুপ্রভাত ডেস্ক »
পশ্চিম ইউরোপে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের মধ্যে জার্মানি ও বেলজিয়ামে হঠাৎ বন্যায় অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল জার্মানিতেই মারা গেছে ১০৩ জন।
শুক্রবার বিবিসি’র প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেলজিয়াম অন্তত ২২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ এবং সুইজারল্যান্ডও। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে গত কয়েক দশকে এমন বন্যা দেখা যায়নি। ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত আরভেইলার অঞ্চলে বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হেলিকপ্টার দিয়ে দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
জার্মানির রাইনল্যান্ড-পালাটিনাটে এবং নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া প্রদেশ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, নেদারল্যান্ডসের বন্যা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
ইউরোপের ওই অঞ্চলে শুক্রবারও ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন ল্যাশেট এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া ফিরে ফিরে আসার ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে একটি একক ঘটনাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলাটা একটু জটিল।
স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে জানানো হয়, জার্মানির বাড নয়নার-আরভেইলার জেলায় প্রয় ১ হাজার ৩০০ জনের খোঁজ মিলছে না।
সেখানে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ধারণা করছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণে এসব বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সাড়ে তিন হাজার নাগরিকের জন্য জরুরি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, জার্মানিতে কয়েকশ সেনা সদস্য এবং আড়াই হাজার ত্রাণকর্মী উদ্ধার কার্যক্রমে পুলিশকে সাহায্য করছে।
বৃষ্টি-বন্যায় সৃষ্ট ভূমিধসে এবং গাছ উপড়ে বন্ধ রাস্তা সচল করতে ট্যাংক নিয়োজিত করা হয়েছে। বন্যায় যারা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের উদ্ধার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হেলিকপ্টার।
বন্যায় জার্মানিতে কমপক্ষে দুই লাখ বাড়িঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রাইন নদীতে বন্যায় শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কলন ও হাগেনসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন শহর প্লাবিত হয়েছে। লেফারকুসেন শহরের একটি হাসপাতাল থেকে ৪০০ রোগীকে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভুপেরটাল শহরে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাদের বাড়িঘরের সেলার তলিয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন তারা।
জার্মানিতে এই বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০০২ সালের বন্যায় ২১ জনের মৃত্যু হয়। বন্যায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত মেরকেল বলেন, “আমি বিস্মিত যে এই দুর্যোগ কবলিত এলাকায় এত বেশি সংখ্যক নাগরিককে দুর্দশা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মৃত ও নিখোঁজদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।”ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণাও তিনি দিয়েছেন।
আগামী সেপ্টেম্বরে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে ওয়াশিংটনে এক বিদায়ী সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেরকেল।
ফেসড্রে নদী উপচে বন্যায় বেলজিয়ামের পূর্বাঞ্চলীয় শহর পেপিনস্টারে ১০টি ঘর ধসে পড়েছে। শহরের এক হাজার বাড়িঘর থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভারি বর্ষণে বেলজিয়ামে গণপরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, জার্মানি অভিমুখী উচ্চ-গতির থালিস ট্রেন সার্ভিস বাতিল করা হয়েছে। প্লাবনের আশঙ্কায় ময়সে নদীতে, সেদেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ, নৌ-চলাচল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন নদীতে পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করায় দক্ষিণের লিমবার্গ প্রদেশে অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বেশকিছু বয়স্ক সেবাকেন্দ্র খালি করে ফেলা হয়েছে।
মাসট্রিখট শহরের ১০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ওই অঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় অপ্রত্যাশিত পরিমাণে ভারি বর্ষণ হয়েছে। নিম্নচাপজনিত আবহাওয়া ফ্রান্সের পশ্চিমে, বেলজিয়ামে ও নেদারল্যান্ডে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতের প্রভাবকের কাজ করছে।
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম