নিজস্ব প্রতিবেদক »
রাবারের তৈরি রাস্তার কার্পেটিং, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, টেম্পু, বাইসাইকেলের টায়ারসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে বিশ্বের অনেক দেশ। আমাদের দেশে ব্যাপক হারে রাবার উৎপাদন হলেও বিদেশের রাবার আমদানি নির্ভরতা কমছে না। কারণ একটাই দেশীয় রাবার গুণগত মানের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তাই সবার আগে রাবারের গুণগত মান উন্নয়ন করতে হবে।
গতকাল বুধবার রাবার বোর্ড আয়োজিত ‘প্রাকৃতিক রাবার ও রাবারভিত্তিক শিল্পপণ্য মেলার’ সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
বস্ত্রমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে আমি ব্যবসা করেছিলাম। রাবারের তৈরি চপ্পল হাওয়া নামে কারখানা করেছিলাম। তখন সবাই বিদেশ থেকে রাবার আমদানি করতো। দেশে রাবার উৎপাদন হয় শুনে আমরা বিভিন্ন হাট থেকে দেড় টাকায় রাবার সংগ্রহ করে কারখানায় আনা শুরু করলাম। সে রাবার দিয়ে তৈরি পণ্যগুলো ৬ মাস টেকার কথা থাকলেও দু-তিন মাসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার বিদেশ থেকে আনা রাবার দিয়ে তৈরি পণ্যগুলো ৬ থেকে ১ বছর টেকসই হচ্ছে। সেসময় রাবারের খাতে সরকারের সুদৃষ্টি না থাকায় কোয়ালিটি নি¤œমানের ছিলো। এখন আলাদা বোর্ড হয়েছে। এখনই সময় দেশীয় রাবারের গুণগত মান উন্নয়ন করা।
তিনি বলেন রাবারের সমস্যা-সংকট সমাধানে এসব মেলা খুব একটা উপকারে আসবে না। তার জন্য দরকার রাবার বোর্ডের সাথে রাবার শিল্প সমিতি, রাবার মালিক সমিতি, বিএফআইডিসির যৌথ বৈঠক। সেখানে সমস্যা-সংকট আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাজ চালিয়ে নিতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় রাবার বাগান সমিতি থেকে রাবারকে কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য করা, রাবারের উপর অর্পিত ২৫% ভ্যাট কমানো, রাবার শ্রমিকদের সুবিধা, প্রশিক্ষণ প্রদান, চাঁদাবাজি- হয়রানি বন্ধ করার আইনি সুবিধা, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করাসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয়।
গাজী টায়ারের পক্ষ থেকে মো. কামরুন জামান বলেন, দেশে রাবার নানা রকম পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়, আমরা প্রধানত টায়ার তৈরিতে ব্যবহার করি। আমরা ভিয়েতনাম, ব্যাংকক থেকে রাবার আমদানি করে থাকি। সেসব ৩ নম্বর মানের রাবার আমাদের দেশের এক নম্বর রাবার থেকে বহুগুণে ভালো। কারণ তাদের প্রক্রিয়াজাতকরণ ভালো। কিন্ত আমাদের দেশের টেপারদের অনভিজ্ঞতার কারণে কষ যেমন বেশি উত্তোলন করা যায় না, অন্যদিকে কষ মানসম্মত হয় না। তাই দেশের টেপারদের নানা রকম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৬০ টনের মতো রাবারের দরকার। মান উন্নয়ন করে এ বিশাল যোগানের চাহিদা দিতে পারে আমাদের দেশীয় রাবার।
রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে রাবার সংশ্লিষ্ট কৃষি ও শিল্প খাতের অবদান জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে সংযুক্ত করার প্রয়াসে কাজ করছে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড। তিনি রাবার শিল্পের উন্নয়নে স্টেকহোল্ডার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহোযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রাবার নীতি ২০১০ সালে, বাংলাদেশ রাবার আইন ২০১৩ সালে গঠন করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে ১৩০৪টি বেসরকারি ও ২৯টি সরকারি রাবার বাাগান রয়েছে।