সুপ্রভাত ডেস্ক
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতি ও নির্বাচন পূর্ববর্তী অনিশ্চয়তায় এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক বহির্ভূত টাকা বা মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ৩৬,০০০ কোটি টাকা বেড়ে চলতি বছরের জুন শেষে ২.৯১ লাখ কোটিতে পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জুন শেষে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ ছিল ২.৩৬ লাখ কোটি। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে মানুষের হাতে টাকা বেড়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি। একটি প্রাইভেট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সুদহার ১০ শতাংশে সীমিত করে দেওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতের হার বাড়িয়ে আরও বেশি নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত আয় থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বর্তমানে ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর সর্বাধিক ৮ শতাংশ সুদহার দিচ্ছে; তবে চলমান মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে এই হার যথেষ্ট নয়। ফলে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে নগদ টাকা উঠিয়ে হাতে রাখতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্যাংকারদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ধীর গতির কারণে মানুষের হাতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে নিজের কাছে নগদ টাকা রাখকেই বেশি নিরাপদ মনে করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘কয়েকটি কারণে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে অন্যতম কারণ হলো চাহিদার তুলনায় নতুন টাকা সার্কুলেশন বেড়েছে, যা এখন মানুষের হাতে রয়েছে।’
এছাড়া, গত বছরের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে, যার তুলনায় আমানতের সুদহার কম হওয়ায় মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৬৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭.৪৮ শতাংশ। আর মে মাসে, মাসিক মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৯.৯৪ শতাংশ, যা বিগত ১১ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দ্রব্যমূল্য ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় খরচ মেটাতে মানুষ বেশি পরিমাণ হাতে টাকা রাখছে। ব্যাংকাররা জানান, ডলার সংকট, রেমিট্যান্সের পতন ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিদায়ী অর্থবছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকহারে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮. ৪৪ শতাংশ, যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন শেষে কারেন্সি ইন সার্কুলেশনের পরিমাণ রয়েছে ৩.১১ লাখ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২.৫৬ লাখ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২১ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২.২৬ লাখ কোটি টাকা।