নিজস্ব প্রতিনিধি, রাউজান »
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীর তীরবর্তী এলাকার বসতঘর, সড়ক, মাছচাষের পুকুর পানিতে ডুবে যায়।
জোয়ারের পানিতে দেড়শতাধিক পুকুরের মৎস্য প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। জোয়ারের পানির আকস্মিক স্রোতে বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন দরগাহ বাড়ি, ভ্রাহ্মণ হাট, লাম্বুর হাট সড়ক, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের উভলং নোয়াপাড়া সড়ক, রাউজান-নোয়াপাড়া সড়ক, কচুখাইন সড়ক, নোয়াপাড়া-চৌধুরী হাট-ঝিকুটি পাড়া সড়ক, চৌধুরী হাট-ঘাটকুল সড়ক, গনি মিয়ার হাট সড়ক, সাম মাহলদার পাড়া কচুখাইন সড়ক, উরকিরচর ইউনিয়নের মদুনা জংগল সড়ক, হারপাড়া সড়ক, উরকিরচর সড়ক, আবুরখীল সড়ক, খলিফার ঘোনা সড়ক, পশ্চিম আবুরখীল ঢাকাখালী সড়ক, সরকার পাড়া সড়ক, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই ডা. রাজা মিয়া সড়ক, আজিমের ঘাট সড়ক, মাওলানা রুহুল আমিন সড়ক, বিনাজুরী ইউনিয়নের পশ্চিম বিনাজুরী কাগতিয়া সড়ক, রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদ্যুার বাড়ি সড়ক, মঘাশাস্ত্রী বড়–য়া পাড়া সড়ক, গহিরা ইউনিয়নের কাজী পাড়া সড়কসহ এলাকার জনগণের চলাচলের ছোটবড় সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদী দিয়ে জোয়ারের পানি হালদা নদীর বেড়িবাঁধ ও তীর বেয়ে কয়েক ফুট উঁচু হয়ে গত ২৪ অক্টোবর সোমবার দিবাগত রাত ১২ টার সময়ে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীর তীরবর্তী বাগোয়ানের পাঁচখাইন, শেখ পাড়া, সওদাগর পাড়া, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের উভলং দাশ পাড়া, সূর্যসেন পল্লি, পালোয়ান পাড়া, ঝিকুটি পাড়া, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, ছমিদর কোয়াং, কচুখাইন, মোকামী পাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের হার পাড়া, মইমকরম, উরকিরচর, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম আবুরখীল, ঢাকাখালী, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই, আজিমের ঘাট, কাসেমনগর, গেলাজার পাড়া, কাগতিয়া, বিনাজুরী ইউনিয়নের পশ্চিম বিনাজুরী, পশ্চিম ইদিলপুর, রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মঘাশাস্ত্রী বড়–য়া পাড়া, অংকুরী ঘোনা, বদুর ঘোনা, রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, জামতল, পশ্চিম গহিরা, গহিরা ইউনিয়নের কোতোয়ালী ঘোনা, কাজী পাড়া, নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহনগর, ইন্দিরাঘাট, নদীমপুর প্রভৃতি এলাকাসমূহে প্রবেশ করে এলাকার মানুষের বসতভিটা, জনগণের চলাচলের সড়ক, মাছচাষের পুকুর-জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের বসতঘরেও পানি প্রবেশ করে।
জোয়ারের পানিতে বসতঘর ডুবে যাওয়ায় ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হওয়া ছাড়াও খাওয়ার পানিও নষ্ট হয়ে যায়। রাউজানের উরকিরচর এলাকার বাসিন্দা মাওলানা কাজী ইলিয়াছ বলেন, হঠাৎ রাতেই জোয়ারের পানি প্রবেশ করলে বৃদ্ধা মা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পানির মধ্যে অবস্থান করতে বাধ্য হই। উরকিরচর হারপাড়া এলাকায় ভাড়াবাসায় বসবাসকারী কয়েকটি পরিবারের সদস্য জানান, রাতে বাসার মধ্যে হঠাৎ জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। ৩ থেকে চার ফুট উঁচু পানি বাসার মধ্যে প্রবেশ করলে ছোট ছোট শিশুদের কাঁধে নিয়ে পানির মধ্যে অনেক কষ্ট করে বের হয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে ওঠে পড়ি। রাত দেড়টার সময় ভাটার সময়ে পানি নেমে গেলে বাসায় আসি। বাসার মধ্যে থাকা আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।
গত ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয় মেম্বারদের নিয়ে কচুখাইন, উভলং, সাম মাহলদার পাড়া, ঝিুকুটি পাড়া, দক্ষিণ নোয়াপাড়া এলাকায় জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দর্শন করেন। রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন আরিফ বলেন, তার ইউনিয়নের মগদাই, আজিমের ঘাট, কাসেমনগর, গোলজার পাড়া, কাগতিয়া এলাকা জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার নিয়াজ মোরশেদ বলেন, জোয়ারের পানিতে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তীরবর্তী ৫টি ইউনিয়নের ১শ ৩৭ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
তার মধ্যে ১শ ৮টি পরিবারের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জোয়ারের পানিতে ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা সহকারী প্রখৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ক্ষয়ক্ষতি কি পারিমাণ হয়েছে তা সরেজমিনে গিয়ে তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে। জোয়ারের পানি পুকুর-জলাশয়ের মাছ পানিতে ভাসিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন এখনও কি পরিমাণ মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।