সুপ্রভাত ডেস্ক :
পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে রহস্যময় অনেক গুহা। বর্তমান সময় পর্যন্ত অনেক গুহা সম্পর্কেই প্রতœতাত্ত্বিকরা খোঁজ পেয়েছেন। এসবের রহস্যও ভেদ করার চেষ্টা করেছেন। তবে এখনো অনেক কিছুরই কূল কিনারা পাওয়া সম্ভব হয়নি। আবার অনেক রহস্যই রয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে।
সম্প্রতি তেমনি এক রহস্যময় গুহার সন্ধান পেয়েছেন অভিযাত্রী দল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত লেচুগুইলা গুহা। লম্বায় বিশ্বে অষ্টম ও দ্বিতীয় গভীরতম গুহা এটি। লম্বায় এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২২ কিলোমিটার আর গভীরতা প্রায় ৫০০ মিটার। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই গুহার কথা অজানা ছিল বিশ্ববাসীর। এলাকাটিও ছিল জনমানবহীন। কারণ গুহার আশেপাশের অঞ্চলসমূহ তেমন একটা বসবাসের উপযোগী নয়।
১৯৮৬ সালে এক দল অভিযাত্রী গুহাটি আবিষ্কার করেন। তারাই এর নামকরণ করেন লেচুগুইলা। এই অঞ্চলে আগাভ লেচুগুইলা নামে এক প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়। সেটার নামেই এই নয়া আবিষ্কৃত গুহার নাম রাখা হয় লেচুগুইলা। এই গুহাটি দেশটির ন্যাশনাল পার্ক সংলগ্ন মরুভূমির নীচে অবস্থিত।
গবেষকরা গুহার ভেতর যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে কেউই এর আকার সম্পর্কে ধারণা করতে পারেননি। তারা যতই এর ভেতরে প্রবেশ করছিলেন ততই যেন গুহার দৈর্ঘ্য বাড়ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২২ কিলোমিটার (৫০০ মিটার) গুহাপথ আবিষ্কৃত হয়েছে।
এর বিশাল আকারই প্রথমে মানুষের মনে কৌতূহলের জন্ম দেয়। তবে বিশাল আকারই এই গুহার সবচেয়ে বড় রহস্য নয়। এই গুহার ভেতরের দেয়ালগুলো বেশ রহস্যময়। প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হওয়া দেয়ালের গায়ের খাঁজ কাটা আকৃতি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
বিভিন্ন রকম নকশার ক্রিস্টালে মোড়া রয়েছে এই গুহার ভেতরটা। এর কোনোটা দেখতে বিশালাকার ফুলের মতো। আবার কোনোটা প্রাসাদের থামের মতো। এই ক্রিস্টালগুলো তৈরি হয়েছে জিপসাম থেকে। এটি মূলত এক ধরনের খনিজ লবণ। যা তৈরি হয় চুনাপাথর থেকে। গুহাতে জিপসামের তৈরি প্রাকৃতিক নকশা মাইলের পর মাইল বিস্তৃত রয়েছে।
তবে গুহার মধ্যে কীভাবে তৈরি হলো এই জিপসামের ক্রিস্টাল? তা এখনো রহস্যই আছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ডা. হ্যাজেল বার্টনের নেতৃত্বে ‘দ্য ভয়েডস’ নামে পরিচিত এক বিশেষজ্ঞ দল লেচুগুইলা গুহায় গিয়েছিলেন। সেখানে টানা আটদিন তারা অভিযান চালায়। পুরো অঞ্চলের ম্যাপ তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন গবেষক দল।
ডা. হ্যাজেল বার্টন বলেন, তিনি অনেক গুহায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। তবে এই গুহার কাজ ছিল অনেক কষ্টকর এবং দুর্বোধ্য। গুহার ভেতরের পানি সবুজ স্বচ্ছ। এর ভেতরের পাথরের দেয়াল তাদের কাজে বেশ বাধা সৃষ্টি করেছিল। গুহার ভেতরের দেয়ালের পাথর দেখলে মনে হবে যেন কেউ থরে থরে সেগুলোকে সাজিয়েছে।
পৃথিবীর বেশিরভাগ গুহা বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তবে লেচুগুইলা গুহার পাথরের ক্ষয় হয়েছে মূলত সালফিউরিক অ্যাসিড দ্বারা। সালফিউরিক অ্যাসিড চুনাপাথরে দ্রবীভূত হয়ে তৈরি হয় জিপসাম। সেই জিপসামই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করেছে বিভিন্ন আকৃতির চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। এই গুহার সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে তুলবে।
এমনকি এই গুহার মধ্যে তৈরি হয়েছে একটি কক্ষ। যার নাম দেয়া হয়েছে শ্যান্ডেলিয়ার বলরুম। সেখানকার জিপসাম পিলারগুলোর দৈর্ঘ্য ২০ ফুটেরও বেশি। এই গুহার ভেতর সূর্যের আলো একেবারেই পৌঁছায় না বললেই চলে। বর্তমানে এর ভেতরের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। এখনো এই গুহা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা।
খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
ফিচার দেউড়ি