রমজানের আগেই ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে। রমজান আসার ১ মাস বাকি থাকলেও ইতিমধ্যেই দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার কর্তৃক বাজার তদারকি করার আগেই মূল্যবৃদ্ধির উৎসবে মেতেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের আগে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে রমজানের সময় বাজার স্থিতিশীল দেখানোর প্রবণতা আছে। তখন সরকার এবং ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়ার আত্মতুষ্টিতে ভোগে কিন্তু জনগণের পকেট কাটা সাবাড় হয়ে যায় এমধ্যে। রমজানের আগে মানুষ নানারকম ব্যস্ততায় থাকেন। নিত্যপণ্য আগেভাগেই। এক সাথে বেশি করে কেনার চেষ্টা করেন আর এই সুযোগ নেন আমদানিকারক, পাইকার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা। রমজানের সময় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি পণ্যের বাড়তি চাহিদার সুযোগে ব্যবসায়ীরা মওকা পেয়ে যান। ভোজ্য তেলের দাম গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকার বেঁধে দিলেও এখন আবার বাড়তি দর নির্ধারণ করার কথা শোনা যাচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। ছোলার দাম যে যা পারে ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। অথচ সামনেই দেশি পেঁয়াজের মৌসুম। চালের দাম কত দফা বাড়লো তার হিসেব ভোক্তারা কিভাবে করবে। চাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করলেও বাজারে তার কোন প্রভাব পড়ছে না। চাল আমদানির সিদ্ধান্তে দেরি, চালের বাজার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করবে।
এদিকে চালের সরকারি মজুদও কমে এসেছে মর্মে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। সামনে বোরো ধান আসছে। সরকারি ধানচাল ক্রয সঠিক সময়ে না হলে, ঢালাও আমদানি করতে দিলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ব্যাপারে সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
নতুন মৌসুমে সবজির দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি থাকবে। তবে কৃষিপণ্য সরবরাহ যাতে নির্বিঘœ থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সময় কৃষকদের বঞ্চিত করে, ভোক্তাদের বিপদে ফেলে অতিরিক্ত মুনাফা করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই সুযোগে বিভিন্ন কোম্পানি অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে সরকারের তেমন দৃষ্টি নেই।
সরকার এবং ব্যবসায়ীরা পণ্যের ঘাটতি নেই বলছে, তাহলে বাজার এমন ঊর্ধ্বমুখি কেন? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ আছে বলে বাজারের নৈরাজ্য ঠেকাতে সব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবার কথা বলেছেন কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাগে আনা যে কঠিন তা ইতিপূর্বে বারবার দেখা গেছে। সরকার টিম গঠন করে নিয়মিত বাজার তদারকি করবে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে কিন্তু ইতিমধ্যে যে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে তাতে তদারকি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবার আশঙ্কা আছে।
সরকার টিসিবির মাধ্যমে এবার পণ্যের পরিমাণ বাড়াবে বলেছে, প্রাক রমজান ও রমজান দুই ভাগে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কথা বলছে তবে এ ক্ষেত্রে যেন টিসিবির পণ্য নিয়ে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে আমরা মনে করি, খোলাবাজার কার্যক্রমও (ওএমএস) চালু থাকা প্রয়োজন। এখনো করোনাকাল চলছে। সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখি হচ্ছে। করোনার সময় অনেকের মজুরি কমেছে, কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়েছে। এই সময়ে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নি¤œ আয়ের ও মধ্যবিত্তদের কষ্টের মধ্যে ফেলবে।
আমরা মনে করি মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে এখন থেকেই তদারকিতে নামা প্রয়োজন। বাজার প্রতিযোগিতামূলক রাখতে আমদানি ও সরবরাহ ঠিক রাখা প্রয়োজন। মুক্ত বাজার মানে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া মুনাফা নয়, এর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন জনস্বার্থেই আর তা করতে হবে সরকারকে। সারা বছর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে দফায় দফায়, আর চরমভাবে প্রতারণা ও ভোগান্তিতে পড়ছেন ভোক্তারা, এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।
মতামত সম্পাদকীয়