করোনার এই দুঃসময়ে ভাল খবর এলো রপ্তানি ও প্রবাসী আয় থেকে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০-২১ সালে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি মার্কিন ডলার।
২০১৯-২০ সালে হয়েছিল ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলার। তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। অন্যান্য খাত ও ভালো করেছে। পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, হালকা প্রকৌশল এসব খাতেও রপ্তানি আয় ভাল হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলার, মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের কাছাকাছি।
করোনাকালের প্রথম দিকে টানা লকডাউনে অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য ধাক্কা খেলেও সরকার তা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা শিল্প, অর্থনীতি ও জীবন জীবিকা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতির গতি সঞ্চারে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। করোনা মোকাবেলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হয়েছে।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনাকালে অনেক কারখানা শ্রমিক কমাতে বাধ্য হলেও আবার নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন। লকডাউনের সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করেছে।
শ্রমিকরাও করোনাকালে কলকারখানা সচল রেখেছেন। পোশাক শিল্পে ক্রয়াদেশও বেড়েছে। এ শিল্পে কর্মপরিবেশের উন্নতি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে।
রপ্তানি খাতের মতো সুসংবাদ এসেছে রেমিট্যান্স খাতেও।
সর্বশেষ অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ সালে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। করোনার দুঃসহকালে বিদায়ী অর্থবছর ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। প্রবাসী আয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতেও করোনার ভয়াবহ থাবা ছিল, অনেকে ঠিকমতো কাজে যেতে পারেননি। রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসীদের সরকারি চ্যানেলে টাকা পাঠাতে সহায়ক হয়েছে। অর্থনীতির এই প্রধান সূচকের উল্লস্ফন মহামারি মোকাবেলা করতে সরকারকে সাহস যুগিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় সোয়া কোটি বাংলাদেশীর পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপির ১২ শতাংশ। প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে আমাদের দূতাবাসগুলির আরো তৎপর ভূমিকা থাকা উচিত। প্রবাস থেকে আসা কর্মজীবীদের টিকা প্রদান নিয়ে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে যা কাম্য নয়।
খাদ্য উৎপাদন, পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স এই তিন খাতে সাফল্যের মূলে রয়েছেন কৃষক ও শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ। এই সাথে যুক্ত হয়েছে উদ্যোক্তাদের মেধা ও সরকারের সঠিক নীতিকৌশল।
রপ্তানি আয় স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পরিস্থিতি, রেমিট্যান্সের রেকর্ড আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখবর। এই গতি অব্যাহত রাখতে দেশের সকল মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব টিকার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞগণ। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে সকল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সামাজিক প্রচেষ্টা থাকা চাই।
মতামত সম্পাদকীয়