সুপ্রভাত ডেস্ক »
শ্রম আদালতের একটি রায়ে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস বলেছেন, তাঁরা যে দোষ করেননি, সেই দায়ে দণ্ড পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা যে দোষ করি নাই– সেই দোষে সাজা পাইলাম। এটা আমার কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল। আমরা এই রায় গ্রহণ করেছি, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এই সাজার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব।”
আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এই রায় দেন। শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূস-সহ চারজনকে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেন আদালত।
ড. ইউনূস ছাড়া এ মামলায় অন্য আসমিরা হলেন: গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত সোমবার বিকেলে এই রায় দেন, এর আগে বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে আদালতে আসেন ড. ইউনূস। তাঁর উপস্থিতিতেই ৮৪ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, “আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে। কিন্তু, এ আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে। এসময় আদালত বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত।”
গত ২৪ ডিসেম্বর তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক ১ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস, গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না। এছাড়া, শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।
গত ৬ জুন এ মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন।
রায়ে সাজা হলেও আপাতত জেলে যেতে হচ্ছে না গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসসহ চারজনকে। আপিলের শর্তে তাদের ১ মাসের জামিন দিয়েছেন বিচারক।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তারা ‘ন্যায়বিচার পাননি’, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিজয় নগরের শ্রম আদালত ও আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
রায়ের খবর সংগ্রহ করতে দেশের বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীর পাশাপাশি বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়চে ভেলেসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিও উপস্থিত হন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সোমবার শ্রম আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
দুপুর ১ টা ৪৩ মিনিট ইউনূস ওই ভবনের পঞ্চম তলায় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের এজলাসে উপস্থিত হন, অন্য আসামিরাও আসেন। ততক্ষণে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এজলাস।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ফরিদা আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, আইনজীবী সারাহ হোসেনও রায় শুনতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত রায় ঘোষণা করে দুপুর সোয়া ২টায়। ইউনূসসহ চার আসামির সাজা ঘোষণা হলে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন জামিনের আবেদন করেন।
পরে আপিলের শর্তে তাদের জামিন দেওয়া হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে আপিল করতে হবে বলে তাদের শর্ত দেওয়া হয়।