চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে পুন:নির্বাচন দাবি করে সিইসি, নির্বাচন কমিশন সচিব, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ৯ জনকে বিবাদি করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন চসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম আদালতের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ খায়রুল আমিনের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা করেন বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট আরশাদ হোসেন। কারচুপির অভিযোগে তিনি ৩১ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইসির বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ এস এম বদরুল আনোয়ার, বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক এনাম, অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল আলম চৌধুরী মারুফ, নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গাজী সিরাজ উল্লাহ, মো. ইদ্রিস আলীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।
মামলা দায়ের শেষে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চসিক নির্বাচনে মোট ৪৮৮৫টি কেন্দ্রে ইভিএমএ ভোট গ্রহণ করা হলেও মাত্র ২০টি কেন্দ্রে মেশিনে প্রিন্টেড ফলাফল দিয়েছে। বাকি ৪৬৬৫টি কেন্দ্রের হাতে লেখা ফলাফল প্রকাশ করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে সবগুলো কেন্দ্রের প্রিন্টেড ফলাফলের লিখিত আবেদন জানালেও তারা তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২২টি কেন্দ্রে আমাকে শূন্য ভোট এবং ১৭৮টি কেন্দ্রে ১০টির কম ভোট দেখিয়েছে যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভোট জালিয়াতি জ্বলন্ত নমুনা। এসবের প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এছাড়াও নির্বাচনের পর প্রথমে আমাদের যে ফলাফলের তালিকা দিয়েছিল তাতে আমার শূন্য ভোট ছিল মাত্র দুই কেন্দ্রে, কিন্তু ফাইনাল তালিকায় শূন্য ভোট দেখানো হয়েছে ২২টি কেন্দ্রে। এর কারণ কি? এর থেকে তো বুঝতে হবে তারা ভোট ডাকাতি করলেও সেটা সেটা সূক্ষ্মভাবে করতে জানেনি।
তিনি বলেন, চসিক নির্বাচনে ভোটের দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪-৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দিন শেষে সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতি ঘণ্টার ভোটের হিসাব দেখতে চেয়েছিলাম। ৭ দিন সময়ও দিয়েছি। কিন্তু এই তথ্য কমিশন দিতে পারেনি। নির্বাচনে ৪ হাজার ৮৮৫টি ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেখানে মাত্র ১০টি বুথে ইভিএম’র প্রিন্টেড কপি দেওয়া হয়েছে। যদি ১০টি বুথের ইভিএম’র প্রিন্টেড কপি থাকে তাহলে সবগুলো ইভিএম’র প্রিন্টেড কপি থাকার কথা। কিন্তু তারা এটা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোট কারচুপির অভিযোগ এবং বিতর্কিত নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফশিল ঘোষণা মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে পুন:নির্বাচনের দাবিতে ৯ জনকে বিবাদি করে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, বহুল বিতর্কিত ইভিএমে ভোটাভুটি হয়েছে। ভোটের ফলাফল পেতে সেই সনাতন পদ্ধতির চেয়েও বেশি সময় কেন লাগল তা এক বড় রহস্য। ইভিএম পদ্ধতি হওয়ার পরও কেন একটি শহরের ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে ১০ ঘণ্টা লাগবে? এলাকা ভেদে ভোটের ব্যবধান ছিল অস্বাভাবিক। কোন কেন্দ্রে প্রাপ্ত ভোটের হার দেখানো হয়েছে ১% এবং আবার কোন কেন্দ্রে ৯৪%। একই ভবনে ২টি কেন্দ্রে ১টিতে ৮৪% অন্যটিতে ১.৬৬% ভোট দেখানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। কিন্তু তাকে আরও সাড়ে তিন লাখ ভোট যোগ করে মেয়র বানানো হয়েছে। মামলায় বলা হয়, মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন চসিক নির্বাচনের ভোটের হিসাব চেয়ে এখনও পাননি। কোনো কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি দেয়া হয়নি। নির্বাচনে তাকে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি