নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরে বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ চলার সময় জামাল খান মোড়ে সড়কের পাশে দেয়ালজুড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্মের আলোকচিত্র নিয়ে তৈরি ম্যুরাল ভাঙচুর হয়েছে। এ ভাঙচুরের জন্য বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদলকে দায়ী করেছে ছাত্রলীগ। ভাঙচুরে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কাজীর দেউড়িতে বুধবার বিকালে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ ডাকে বিএনপির সহযোগী তিন সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। এতে নগরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকে সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকেই মিছিল নিয়ে জড়ো হয়।
ওই সমাবেশস্থলের এক কিলোমিটার দূরে জামাল খান মোড়ে খাস্তগীর স্কুলের মাঠের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম নিয়ে গ্লাস ম্যুরাল, যা স্থাপন করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিতে বেশ কয়েকটি মিনি ট্রাকে করে যাচ্ছিলেন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মহসিন কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তারা আপত্তিকর স্লোগান দিতে থাকেন। তখন ওই দুই কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ট্রাকগুলো থামান। এরপর দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ইটপাটকেল ছোড়েন। পরে সেখান থেকে যাওয়ার সময় যুবদলের নেতাকর্মীরা নগরের জামালখান এলাকায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র-ইতিহাসসংবলিত ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। ভাঙচুর চলাকালে জামালখান থেকে আসকার দীঘির পাড় হয়ে কাজীর দেউড়িতে সমাবেশস্থলের আগ পর্যন্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের সীমানা দেওয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র-ইতিহাসসংবলিত ম্যুরাল ভেঙে দেয়া হয়েছে। ফুটপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাচের টুকরা। ভাঙা চূর্ণগুলো ফুটপাত ও মূল সড়কে পড়ে থাকায় চলাচল করতে কষ্ট হয় পথচারীদের। রাস্তায় যুবদলের কর্মীর একটি লাল রঙের টুপিও পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া জামালখান মোড়ের পশ্চিম অংশে রাস্তার সড়কের ডিভাইডারে লাগানো আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার একটি ম্যুরাল ভাঙচুর করে ফুটো করে দেওয়া হয়। এসময় জামালখান এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের ফুলের টব, শেখ রাসেল পাঠাগারে হামলা চালানো হয়। একইভাবে কাজীর দেউড়ি এলাকায় আঞ্চলিক লোক প্রশাসন কেন্দ্রের গেটে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর পুরো এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ ভাঙা অংশগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে যাওয়ার পথে কলেজে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় আমরা তাদের প্রতিহত করি। তারাই গিয়ে জামাল খানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙেছে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, যুবদলের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে ম্যুরালগুলো ভেঙে দিয়েছে। ৫০টি ম্যুরালের বেশিরভাগই ভেঙে ফেলেছে। ঘটনাস্থলে যুবদলের ব্যানার ফেস্টুন পাওয়া গেছে।
কোতয়ালি থানার ওসি জাহেদুল কবীর বলেন, ‘জামালখান এলাকায় ভাঙচুর চালান যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে যুক্ত বাকিদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।’
গ্রেফতার পাঁচজন হলেন- মাহবুব সিদ্দিকী (৩৫), মো. এরফান (৩০), নুরুল ইসলাম মাসুম (৩৯), ইমন খান (২০) এবং মহিউদ্দিন হাসান ইমন (২০)।
পুলিশ জানিয়েছে, মাহবুব পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। এরফান একই ওয়ার্ডের চার নম্বর ইউনিট ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। মাসুম ও মহিউদ্দিন একই ওয়ার্ডের যুবদলের কর্মী। ইমন খান চান্দগাঁও থানা যুবদলের কর্মী।
তবে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও ম্যুরাল ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ। তিনি বলেন, সমাবেশে আসার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরাই তাদের আটকান। ফলে বাগবিত-া হয়। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় কোনো পাল্টা হামলা করা হয়নি। কোনো ম্যুরাল ভাঙা হয়নি।