রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বাড়ছে অগ্নিকা-ের ঘটনা। বিগত ৫ বছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ২শত ৯৪টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি অগ্নিকা-ের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে।
পাঁচ বছরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ৮৮টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুন লেগেছে ৩৪ বার ও বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে ২৩ বার আগুনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ২০২২ সালে। ওই বছর ৭২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। তবে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট সবচেয়ে বেশি অগ্নিকা- হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছর বৈদ্যুতিক শট সার্কিটে আগুন লেগেছে ২২টি স্থানে। এতে ক্ষতি হয় প্রায় ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
মিরসরাই ফায়ার সাভির্স অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উপজেলায় ৪৬টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে ২২ বার। রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৮টি। ৪৬টি অগ্নিকা-ে ক্ষতি হয় প্রায় ৪৭ লাখ ৫ হাজার টাকা।
২০১৯ সালে ৬০টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ৬০টির মধ্যে ১৮টি ঘটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে। ৮টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে রান্নাঘরের চুলার কারণে। ৬০টি অগ্নিকা-ে ক্ষতি হয় প্রায় ৫২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
২০২০ সালে উপজেলায় ৫১টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে ১১টি আগুনের ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈদু্যুতিক শট সার্কিট থেকে। ৯টি আগুন লাগে রান্নাঘরের চুলায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
২০২১ সালে উপজেলায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে ৬৫টি। বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ২০টি স্থানে। চুলা থেকে আগুন লাগে ৪টি বাড়িতে। এছাড়া বিড়ি সিগারেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ১০টি স্থানে।
২০২২ সালে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় আগুন লাগে ৭২টি স্থানে। এতে ১৭টি স্থানে আগুন লেগেছে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে। ১৩টি স্থানে আগুন লেগেছে বিড়ি সিগারেটের কারণে। এছাড়া রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লাগে ৫টি স্থানে। ৭২টি অগ্নিকা-ে আনুমানিক ক্ষতি হয় ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আরো জানা গেছে, ২৯৪টি অগ্নিকা-ের মধ্যে ১শ’টি আগুন লাগে বসতঘর ও রান্না ঘরে। ২১টি আগুন লাগে গোশালা ও খড়ের গাদায়। এছাড়া ১২টি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগুন লাগার সাথে সাথে ঘরের লাইন বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। লাইন বন্ধ করে দিয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে হবে।
এদিকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রত্যেক বছর একাধিক অগ্নিকা- নির্বাপক মহড়ার আয়োজন করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়।
বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত কেন বেশি হয় এমন প্রশ্নের জবাবে বারইয়ারহাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম আবু জাফর বলেন, সাধারণত অসর্তকতার কারণে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকা-ের ঘটনা কমাতে হলে আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে মানসম্মত বৈদ্যুতিক সামগ্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত কমাতে হলে আমাদের ঘরের সুইচ ও মাল্ট্রিফ্লাগ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে কোন সুইচে ত্রুটি দেখা গেলে দ্রুত সারিয়ে ফেলা উচিত। এছাড়া বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে দ্রুত লাইন বন্ধ করে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে হবে।