নিজস্ব প্রতিবেদক »
মন্ত্রিপরিষদের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জানতে পেরেছি, এই এলাকাটি ছিল পুরোপুরি মাদকের আখড়া। আমি খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করছি যে, মাদকের আখড়া আজ ফুলের কাননে পরিণত হয়েছে। এটা আজ চট্টগ্রামবাসীর অহংকারের জায়গা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এ পার্ক পর্যটন ক্ষেত্রে সারা দেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে গড়ে তোলা ডিসি পার্কে আয়োজিত চট্টগ্রাম ফুল উৎসব ২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘উৎসবটি দ্বিতীয়বার হলেও আমার জন্য প্রথমবার এরকম একটি ফুল উৎসবে আসা। অসাধারণ একটি উৎসব। দেড়-দুইমাস জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা খুব ব্যস্ত ছিলাম। সে ব্যস্ততার জন্য আমাদের মাঝে একটি স্ট্রেসও তৈরি হয়েছিল। আমি কিছুক্ষণ ফুলের সমারোহ দেখলাম। আর সেই স্ট্রেসটা যেন কোথায় হারিয়ে গেল। স্ট্রেসের চাপটি আমি আর অনুভব করতে পারছি না।’
চট্টগ্রামে ফুল উৎসব বাংলাদেশের নতুন অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশে^র বিভিন্ন দেশে বছরের বিভিন্ন সময় ফ্লাওয়ার ফেসটিবল হয়। ফেসটিবল ঘিরে ঐ শহরে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সেখানে শুধু সে দেশের মানুষ নয়, পার্শ^বর্তী দেশের মানুষও অংশগ্রহণ করে। সুতরাং চট্টগ্রাম ফুল উৎসব শুধু আমার কাছে নয়, বাংলাদেশের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। শুধু ফুল আর দিঘী নয়, এ পার্ককে ঘিরে ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর এটি দেশের অন্যান্য জেলার জন্য হবে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় প্রকল্প। এ প্রকল্পটি আমাদেরকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’
এ সময় তিনি চট্টগ্রামের ন্যায় উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা কাজে লাগিয়ে মানুষের মানসিক বিকাশ ও অর্থনীতিক সমৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে সকল জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানান। এতে করে আজকের নতুন প্রজন্ম তাদের জীবনকে ফুলের মতন করে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে। ফুল যেমন অন্যের জন্য ফোটে, তরুণ সমাজও নিজেদের অন্যের জন্য ফোটাতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ফুল উৎসবে এসে আমি অনেক বিমোহিত। বাংলাদেশের জন্য একটি উদাহারণ তৈরি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার। এ উদ্যেগের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে একটি নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে, এখানে স্ট্রেসফুল নাগরিক জীবন থেকে বের হয়ে এসে আবার নিজেকে খুঁজে ফিরে পাওয়া যায়। এখানে একটি স্থায়ী মিউজিয়াম হবে। সাগরের পাড়ে একটি স্ট্রাকচার গড়ে তোলা হবে। এসব কিছু মহাপরিকল্পনা হিসেবে জেলা প্রশাসন আমাদের উপস্থাপন করেছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটা চট্টগ্রামের জন্য চমৎকার একটি সংযোজন। এ প্রকল্পটিকে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি ডিপিপি আকারে। আশা করছি অচিরেই চট্টগ্রামবাসী বাংলাদেশের জন্য একটি পথ-পথিকৃৎ হিসেবে আবির্ভূত হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে. এম. রফিকুল ইসলাম বক্তব্য করেন। এসময় ফুল উৎসবে সময় কাটাতে আসেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থী পাপিয়া সুপ্রভাতকে বলেন, ‘চট্টগ্রামকে পর্যটননগরী বলা হলেও চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়ানোর জায়গার বড্ড অভাব। ডিসি পার্কের এ ফুল উৎসবের কথা শুনে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। চলে এসেছি লাখ লাখ ফুলের জলসায়। এত ফুলের মাঝে আসলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। আমার অনুরোধ থাকবে, শুধু নির্দিষ্ট সময়ে এমন আয়োজনের পাশাপাশি সবসময় যেন মানুষ এখানে এসে ফুল দেখতে পায়, সে ব্যবস্থা করা।
জানা যায়, সাধারণত ডিসি পার্কের টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা রাখা হলেও ফুল উৎসবের প্রথমদিনের দুপুর পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় পুরো পার্ক। এবারের উৎসব আগের চেয়ে আরও প্রাণবন্ত করতে সাম্পান বাইচসহ বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। শিশুদের জন্য আলাদা আলাদা কিডস জোন, দীঘির পানির ওপর নির্মিত কাঠের পুলের রাস্তা, আঁকাবাঁকা সেতু, ছনের ছাউনির গোলঘর, বাদামতলায় চেয়ার-টেবিল, পানিতে প্যাডেলচালিত কায়াকিংসহ ঘুড়ি উৎসব, ফানুস উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব ও ১০০’র বেশি গুণী শিল্পীদের চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রকৃতির বর্ণ, গন্ধ ও ছন্দের অনুপ্রেরণায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম ফুল উৎসব ২০২৪ আয়োজন করেছে। এ উৎসব আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধাণের জন্য খোলা থাকবে। এবারের ফুল উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে সানসেট পয়েন্ট, মাসব্যাপী আর্ট প্রদর্শনী ও নৌকা বাইচ, স্যুভেনির শপ, ভায়োলিন শপ, ঘুড়ি উৎসব, কিড্স জোন, পিজিওন কর্নার, সেরফি কর্নার, পুতুল নাচ ও ২ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পিঠা উৎসব এবং ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি বই উৎসব
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে শুকতারা নামে একটি রেস্তোরাঁসহ ১৯৪ একর জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে একটি পার্ক গঠন করেছিল জেলা প্রশাসন। এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক’। এখন সেটা পরিচিত ডিসি পার্ক নামে। ওই জায়গায় মাসব্যাপী ফুল উৎসবের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।