২০১৫ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত ১৪ দশমিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ করা হয়।
কয়লা বিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরবর্তী সময়ে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের চওড়া ১০০ মিটার বাড়াানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়।
জানা গেছে, মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কে›ন্দ্র চালু হবে আগামী বছর। মাতারবাড়ি এখনো বন্দর হিসাবে গড়ে না উঠলেও এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাবাহী ৭টি বড় জাহাজ ভিড়ে ইতিমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্য ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিজেদের সক্ষমতার রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।
২০২০ সালের মার্চে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা যোগান দেবে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের দুটি অংশ। একটি হলো বন্দর নির্মাণ এবং অপরটি সড়ক ও জনপথের আওতাধীন সড়ক নির্মাণ। প্রকল্পের আওতায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস জেটি এবং ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কনটেইনার জেটি নির্মিত হবে। জেটি নির্মাণ কাজ শেষ করতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। তখন ১১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন্দর।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের দুই টার্মিনালে মোট ৭৬০ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণ করা হবে। সেখানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে ভিড়বে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জাহাজ। আর ৩০০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে ভিড়বে ২০০ মিটার লম্বা সাধারণ জাহাজ। নৌপথে এখন পানির গভীরতা ১৬ মিটার। এই গভীরতা ব্যবহার করে ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো নামানোর এই টার্মিনাল। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় মাতারবাড়ি টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
ভূ-অবস্থানগত সুবিধা এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা থাকায় মাতারবাড়ি বন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ বন্দরকে কেন্দ্র করে নিকটবর্তী এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটবে। ফলে বিপুলভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ব্লু-ইকোনমি তথা তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। এতে দুই শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
এ মুহূর্তের সংবাদ