মাঠ ছেড়ে ছোট্ট স্ক্রিন যখন খেলার জগৎ

জনি সিদ্দিক »

​ভূমিকা : বন্ধুরা, তোমরা সবাই কেমন আছো? তোমাদের দেখলেই মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। যখন ছুটির ঘণ্টা বাজলেই আমরা দৌড়ে যেতাম মাঠে। গোল্লাছুট, ক্রিকেট, ফুটবল, বাঘ বকরিসহ কত ধরনের খেলা যে আমরা খেলেছি! কতো আনন্দ, কতো হই-হুল্লোড় করেছি! কিন্তু আজকাল যেন খেলার সেই ছবিটা পাল্টে গেছে, শৈশবের আনন্দ হারিয়ে গেছে। এখন আমরা মাঠে যাওয়ার চেয়ে মোবাইলের ছোট স্ক্রিনেই বেশি সময় কাটাই। শিশু দিবসে শিশুদের অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু খেলার অধিকার রক্ষায় আমাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিজে থেকেই নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তোমরা মাঠের খেলাধুলা বাদ দিয়ে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে গেছো। কেন তা পরিহার করবে? বলি শোনো-
​মোবাইল: বন্ধুত্বের আড়ালে ক্ষতির কারণ
​আজকাল আমাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। এতে অনেক মজার গেম আছে, ভিডিও আছে। যদিও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে জ্ঞান আহরণ করা যায় এবং এটি অনেক উপকার করে, তবুও আমরা যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন এর কিছু মারাত্মক ক্ষতিও হয়। যেমন-
​১. শরীর হচ্ছে অলস: মাঠে দৌড়ালে আমাদের শরীর ও মন সতেজ থাকে। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু মোবাইল নিয়ে বসে থাকলে শরীর অলস হয়ে যায়, শক্তি কমে যায় এবং শারীরিক পরিশ্রম করতে গেলে খুব দ্রুত আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
​২. চোখের ক্ষতি: ছোট স্ক্রিনের আলো আমাদের চোখের জন্য খুব ক্ষতিকর। বেশি সময় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে ব্যথা হয়, চোখে পানি ঝরে। এই অভ্যাস ভবিষ্যতে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে কমাতে পারে।
​৩. বাস্তবিক বন্ধুবিহীন: কিছু কিছু অনলাইন গেম খেলার সময় আমরা ভুলে যাই যে আমাদের আসল বন্ধু আশেপাশে আছে। এতে করে আমরা বাস্তবিক বন্ধুত্বের গুরুত্ব ভুলে অনলাইন-নির্ভর বন্ধুদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। অনেকেই এর ফলে প্রতারিত হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দক্ষতা হারাচ্ছে।
শৈশব হারানো খেলার মাঠের সংকট : ​অবশ্য মোবাইলের প্রতি আসক্তি হওয়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হলো খেলার মাঠ কমে যাওয়া। আমাদের স্কুলগুলোর মাঠ ছোট হয়ে আসছে, অনেক মাঠেই বড় বড় দালান উঠছে। খেলার জায়গা কমে যাওয়ায় তোমরা চাইলেও আর আগের মতো খেলতে পারো না। কোনো এক গুণীজন ও শিশু প্রেমিক বলেছেন, ‘খেলার মাঠ হলো শিশুদের ফুসফুস।’ ফুসফুস যেমন আমাদের শ্বাস নিতে সাহায্য করে, মাঠও তেমনি আমাদের সুস্থভাবে বড় হতে সাহায্য করে। যখন মাঠ থাকে না, তখন আমরা ঘরবন্দী হয়ে যাই, আর বাধ্য হয়ে মোবাইলের দিকেই ঝুঁকে পড়ি।
তোমরাই পরিবর্তন আনতে পারো
​বন্ধুরা, তোমরা শিশুরা যদি চাও, তাহলে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। চলো, তোমরা নিজেরা কিছু প্রতিজ্ঞা করো। তোমরা মোবাইল দেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নাও। প্রয়োজন ব্যতীত মোবাইল দেখবে না। বাকি সময়টা খেলা ও গল্পের বই পড়ার জন্য রাখবে। যেখানেই ফাঁকা জায়গা থাকবে সেখানেই খেলতে হবে। বড় মাঠ না পেলে কী হয়েছে? স্কুলের বারান্দায়, বাড়ির ছাদে বা অ্যাপার্টমেন্টের নিচে ছোট জায়গায়ও আমরা দারুণ মজার মজার খেলা খেলতে পারি। মোটকথা, একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তোমাদের খেলাধুলার সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। তোমার মা-বাবাকে বোঝাও যে খেলাধুলা করা কতোটা দরকার। মাঠে দৌড়ালে শরীর ভালো থাকে, আর এতে করে পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ে। এরপর তোমার বন্ধুদের বাড়িতে বা ছাদে খেলার জন্য ডাকো। সবাই মিলে একটা নতুন খেলার দল তৈরি করো।
​উপসংহার: মনে রেখো বন্ধুরা, জীবন হলো একটি লম্বা দৌড়। এই দৌড়ে সফল হতে হলে আমাদের মন এবং শরীর দুটোই সুস্থ রাখা দরকার। আর শরীর সুস্থ রাখার সেরা উপায় হলো মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করা, মোবাইল স্ক্রিনে আসক্ত না হওয়া। তবে মনে রাখবে- বই পড়ার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এখন তো তোমরা মোবাইল পেয়ে বই পড়াও ভুলে গেছো। এটা খুবই আতঙ্কের বিষয়। জীবনকে গড়তে হলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। একাডেমিক বই তো পড়তেই হবে সাথে বিভিন্ন কোরান, হাদিস, সাহিত্য বিষয়ক বই অবশ্যই পড়তে হবে। কিছুতেই মোবাইল স্ক্রিনের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। তাই এবারের বিশ্ব শিশু দিবসে আমাদের শপথ হোক- ‘আমরা স্ক্রিন ছেড়ে ফিরব মাঠে/ সুস্থ শরীরে মন বসবে পাঠে।’