নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে বেড়েছে প্রতিটি জিনিসের দাম। যে কারণে এখন সীমিত আয়ের মানুষদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অতিরিক্ত দামে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে মধ্যবিত্তদের অনেকেই মাংস-মাছ ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকছেন সবজির দিকে। এ সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন শাকসবজি ব্যবসায়ীরা- দাবি ক্রেতাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে ফিরিঙ্গিবাজার, বক্সিরহাট কাঁচা বাজাওে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে খুচরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে, বেগুন ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, সিম ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা। এই দাম গত এক মাসের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
নগরীর বক্সিরহাটে কথা হয় জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যাংককর্মীর সঙ্গে। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘১০ বছর ধরে চাকরি করছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে সে অনুযায়ী আমাদের বেতন বাড়েনি বরং কমেছে। এই স্বল্প বেতন বা আয়ে বাজারে আসলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই সব টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। সঞ্চয় তো দূরের কথা মাস শেষে আরো কর্জ হয়। বিশেষ করে বাজারে মাছ ও মাংসের কথা এখন চিন্তায় করতে পারি না। মাছ-মাংস এখন ধনী লোকের খাবার। তাই কম করে সবজি কিনেই বাসায় ফিরতে হয়।’
এ বাজারে শাকসবজি কিনতে আসা শ্রমিক রাজমিস্ত্রি দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। দিনে যে মজুরি পাই তা দিয়ে কোনমতে পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে চলছি। গত এক বছর ধরে বাজারে সবজির দাম কমছে না। শীতকালীন সবজি বের হয়েছে । আলু ও পেঁপে ছাড়া কোন সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে নেই। আমার মতো একজন শ্রমজীবী দৈনিক আয়ের টাকা দিয়ে চাল কেনার পর বাজারে এসে মাছ মাংস তো দূরের কথা ভালো সবজির দিকেও তাকাতে পারি না। তাই তুলনামূলক কম মূল্যের পেঁপে ও আলু এই দু’প্রকার সবজি নিয়ে ফিরছি। সবজির বাজারও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। একেক বাজারে একেক দামে বিক্রি করছে। তাছাড়া এখন আর মাছ-মাংসের কথা ভাবতেই পারি না।’
বক্সিরহাট ও ফিরিঙ্গীবাজার ঘুরে দেখা গেছে- জামাল, দিদার ছাড়াও অনেক মধ্যবিত্ত শীতকালীন শাক সবজি কিনে বাসায় ফিরছেন। বাজারে ক্রেতাদের কাছে এসব শাক সবজির দামের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এই ভরা মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকলেও দাম কমছে না। বরং গতবারের তুলনায় এবারের দাম এখনো অনেক বেশি। তাই সবজি হোক বা মাছ সব কিছুই এখন প্রয়োজনের চেয়ে কম কিনছেন ক্রেতারা।
বক্সিরহাটের সবজি বিক্রেতা মো. সালাম বলেন, ‘বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করছে কিন্তু দাম এখনো কমছে না। মানুষের আয় কম থাকায় আগের মত তেমন ক্রেতার চাপ নেই। আলুৃ ও পেঁপের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকায়। মানুষ এই দু’টি সবজি বেশি কিনছে।’
এদিকে বাজারে মাছ মাংসেরও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বক্সিরহাট কাঁচা বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। আর খাসির মাংস ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা। দেশি মুরগি কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০ টাকা, লেয়ার ২৮০ টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে।
হাঁসের ডিমে দাম ডাবল সেঞ্চুরি
অন্যদিকে এক মাসের ব্যবধানে লেয়ার মুরগির ডিম ডজন প্রতি ২০ টাকা কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও হাঁসের ডিমের দাম বেড়েছে। হাঁসের ডিম দাম ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। গত মাসে হাঁসের ডিমের দাম ডজন প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বক্সিরহাটে ডজন ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বক্সিরহাটের ডিম ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ‘বাজারে লেয়ার মুরগির ডিম পর্যাপ্ত থাকলেও হাঁসের ডিম নেই। আমরা পাহাড়তলী থেকে এনে বিক্রি করছি। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে তাই ক্রেতাদের বেশি নিচ্ছি মনে হতে পারে।’
মাংস বিক্রেতা রশীদ মোল্লা বলেন, ‘মানুষ আগের মত তেমন মাংস কিনছে না। কোন অনুষ্ঠান ছাড়া মাংসের তেমন অর্ডার নেই। কেজি ৮শ’ টাকা দিয়ে তো আর সবাই মাংস কিনতে পারে না।’
অন্যদিকে বাজার দু’টিতে মাছের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা দরে এখানে আকারভেদে রুইমাছ ২৫০-৩০০ টাকা, মৃগেল ২২০-২৫০ টাকা, কার্প ২০০-২২০ টাকা, পাঙাস ১৫০-১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, কাতলা ২৫০-৪৫০ টাকা, বাটা ১৬০-১৮০ টাকা, শিং ৩০০-৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০-২৫০ টাকা, পোয়া ২৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কোরাল ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, লইট্টা ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, ফাইস্যা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে আসা নগরের এক কেজি স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘একমাস পর মাছ কিনতে আসলাম। শুক্রবার মেহমান আসবে। কেজি স্কুলে তেমন বেতন-ভাতা পাই না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমি। শিক্ষকতার পাশাপাশি টিউশনি করে কোনমতে পরিবার নিয়ে চলছি। মাছ-মাংস এখন আমাদের মত নি¤œ আয়ের মানুষের খাবার নয়।’