মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের উড়াল সড়কটি চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৪৫৮ তম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।

তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪৫৮তম সভায় তিনি প্রস্তাবটি তোলেন। পরে সবাই সম্মতি প্রকাশ করলে এ নামকরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।’

সভা শেষে সংস্থাটির বোর্ড সদস্য অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলও উদ্বোধন হতে পারে। টানেলের উদ্বোধনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আসলে তখনই সেটি উদ্বোধন করা হতে পারে।’

জানা যায়, নগরের লালখান বাজার থেকে শুরু হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হচ্ছে। এতে রাখা হয়েছে ২৪টি লুপ ও র‍্যাম্প এবং ৩৯০টি পিলার। এছাড়া ৯টি এলাকায় ২৪টি র‌্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) থাকবে। র‌্যাম্প ও লুপ মিলে উড়াল সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এতে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।

প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংসহ প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া লালখান বাজার অংশে কিছু কিছু জায়গায় মাটি ও পাইলিংয়ের কাজ চলছে। অসম্পূর্ণ থাকা কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কি কি কাজ বাকি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল ফ্লাইওভারের ওঠা-নামার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এ কাজ শেষ হতে আরও বেশ কিছু সময় লাগবে। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো মূল ফ্লাইওভার চালু করা। মূল ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর আমরা র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ করবো। এখন ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলার কারণে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এ ভোগান্তি কমিয়ে রাখার চেষ্টা করছি বলেই আমরা এখন র‌্যাম্পের কাজ করছি না।’

জানা যায়, নগরের টাইগারপাস মোড়ে চারটি, আগ্রাবাদ মোড়ে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলা মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেড মোড়ে চারটি, কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে দুটি, কাঠগড়ে দুটি এবং পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় দুটি র‌্যাম্প বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে এ প্রকল্পে।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পতেঙ্গার বিমানবন্দর এলাকা থেকে নিমতলা পর্যন্ত আনুমানিক ১০ কিলোমিটার ফ্লাইওভারটির ভৌত কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নিমতলা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে রেলিং-পাইলিং ও ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এরমধ্যে আগ্রাবাদ চৌমুহনী থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৭ সালের ১১ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। যৌথভাবে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র‌্যাঙ্কিন। প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ছিল তিন হাজার ৭২০ কোটি ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭২৮ টাকা। প্রকল্পের পাইলিং কাজ ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ২০২২ সালের প্রকল্প সংশোধনীতে ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়। সংশোধিত প্রকল্পে আরও ৬৪৯ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার ৯১ টাকা ব্যয় বাড়ে। আর মেয়াদও বাড়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।