হাফিজ রশিদ খান »
বাঙালি জাতির ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি তুলনারহিত মহাবিস্ময়ের মহানাম। আজ এই মহামানবের ১০৩তম (১৯২০-২০২৩) জন্মদিন। দেশে দিনটি উদযাপিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস হিশেবে। এতে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে একটি ফুটফুটে শিশুর মর্ত্যে আগমনের নির্মল দৃশ্যপট। যে-শিশুটি উত্তরকালে তাঁর পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলোকে একজন সুস্থ, সবল ও উন্নত মন-মানসিকতায় ঋদ্ধ হয়ে গড়ে ওঠেন। বাংলাদেশের আপামর মানুষের নয়নমণি হয়ে ওঠেন পদে-পদে তাঁর বলিষ্ঠ স্বদেশপ্রীতি, স্বজাতিপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সেই আলোকদীপ্ত শিশুটির আদলে দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সত্যের পক্ষে অবিচল সৈনিকরূপে গড়ে উঠবে দেশের সকল শিশু। এই লক্ষ্যেই জাতির পিতার জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবসরূপে প্রতিষ্ঠ দেয়া হয়েছে।
আমাদের মনে পড়ে, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকতার যাঁতাকলে পিষ্ট এদেশের কৃষক-শ্রমিক ও মধ্যবিত্তশ্রেণির নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হওয়ার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে প্রবলভাবে বিচলিত ও মর্মাহত করেছিল। তাই তিনি তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির পথ অন্বেষণে ব্রতী হন। বিগত শতকের ষাটের দশকে অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের কঠোর বিধিনিষেধ ও বেড়াজালের সীমানা পেরিয়ে তিনি জাতীয় মুক্তির মহাসনদ ৬ দফা ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নে এগিয়ে গেলেন তাঁর সংশপ্তক অনুসারী ও সতীর্থদের নিয়ে। এভাবে ৭০ দশকে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো মুক্তিপিয়াসী জনসাধারণের অকুণ্ঠ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী জনগণের এই ধস নামানো রায়ে বিচলিত হয়ে দমন-পীড়ন ও গুলি-হত্যাযজ্ঞের পথে অগ্রসর হলে শুরু হয় মরণপণ মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে জন্মগ্রহণ করে।
এদেশের আপামর মানুষ, তাঁদের জীবনধারার স্বতন্ত্রতা, ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসকদের অপরিমেয় শোষণ ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় বাঙালি জাতিসত্তার তেজোময় ও হিমাচলপ্রতিম জাগরণের প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ব্যক্তিগত জীবনের সমুদয় সুখাকাক্সক্ষা তুচ্ছজ্ঞান করে জাতির মননের আকাশজুড়ে জ¦ালিয়েছেন মুক্তি আকাক্সক্ষী বাঙালি জাতিসত্তার ধ্রুব, অনির্বাণ পিদিমগুচ্ছ। উপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ধর্মবর্ণনির্বিশেষের জাতীয় ঐক্যের ইস্পাতদৃঢ় পাটাতন সৃষ্টি করে স্বীয় মাতৃভূমির মানব সন্তানদের জন্যে নিশ্চিত করেছেন বিচরণের অবাধ স্বাধীনতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন দিয়ে রাঙানো ভালোবাসার বিশাল বোধে অপরিমিত ত্যাগ ও তিতিক্ষার অভ্রংলিহ মিনার স্থাপন করেছেন মানবীয় ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায়। সভ্যতার রাজপ্রাসাদে শ্রেষ্ঠতম ভূমিপুত্রের উজ্জ্বল কিরীটধারণ করে মাতিয়েছেন জগতের বিবেক ও পারিপাশির্^কতার আবহ।
জাতির পিতার এই মহান জন্মদিনে তাঁর অবিনশ্বর আত্মা ও কৃতীকর্মের প্রতি দেশবাসী আজ আনত চিত্তে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করবে।