আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির দিন। বাঙালির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনের সূচনালগ্নে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান নামক এক আজগুবি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাতে এই দেশের জনগণের প্রকৃত মুক্তি ঘটেনি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা স্থাপিত হলে জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটে। এর দুবছর পর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টের কাছে হেরে যায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানে গণতন্ত্র চর্চার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল তা দীর্ঘ হলো না সামরিক শাসন জারির কারণে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অতি দ্রুত এই কর্মসূচি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পাকিস্তানি শাসকরা আন্দোলনকে স্তিমিত করার লক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে রাষ্ট্রদ্রোহী ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে কারারুদ্ধ করে রাখে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি শাসক এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে ষড়যন্ত্র করে জাতীয় সংসদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসভায় . দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হয়।
বর্তমান সরকার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লক্ষমাত্রা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের পেছনে প্রকৃত অবদান হলো সাধারণ মানুষের যাদের শ্রম, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা না হলে এই উন্নয়ন সম্ভব হতো না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রকৃত গণযুদ্ধ। যেখানে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অংশ নিয়েছিল। এই মুক্তিযুদ্ধ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। ফলে বিজয়ের পর রাষ্ট্রের মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল চারটি মৌলিক স্তম্ভের ওপর। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
দেশে জঙ্গিবাদের মতো কোনো অপশক্তির উত্থান হলে শুধু যে এই উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে তাই নয়, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। মনে রাখতে হবে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল একটি সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে এসে। এই রাষ্ট্রের জন্মযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল সাধারণ মানুষ। তাই এই রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হবে সকল মানুষের দেশ হিসেবে। গণতন্ত্র ও শান্তির দেশ হিসেবে।
মতামত সম্পাদকীয়