ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, কারবালা ময়দানে নবীদৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইনের (রা) নেতৃত্বে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পতাকাই সমুন্নত হয়েছিল। আর নরপিশাচ ইয়াজিদ অন্যায়, মিথ্যা ও জুলুুমতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে যুগে যুগে ধিকৃত হয়েই থাকবে। পূতপবিত্র নবী পরিবারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করার অপরাধে ইয়াজিদের ঠাঁই হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। যুুগে যুগে মজলুম নিপীড়িত অধিকারবঞ্চিত মানুষের ভরসা ও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা)।
নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল (শুক্রবার) ৬ষ্ঠ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এ কথা বলেন।
মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আত্মশুদ্ধি ও অন্তরের পবিত্রতা ছাড়া প্রকৃত মুমিন মুসলমান হওয়া যাবে না। নিষ্কলুষ আত্মা ও চিন্তার বিশুদ্ধতাই যেকোনো আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। কারবালা মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সুফিবাদি চেতনার পরিশুদ্ধ মানুষ তৈরির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।
বিদেশি আলোচক ছিলেন ভারত কাসওয়াসা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন আল্লামা সৈয়দ আশরাফ আশরাফি আল জিলানি আস সিমনানি। তিনি বলেন, সুফিবাদই ইসলামের নির্যাস। সুফিবাদি মুসলমানরাই পৃথিবীতে প্রকৃত ইসলামচর্চা জারি রেখেছে। সুফিবাদে প্রতিষ্ঠিত থাকা ছাড়া ইসলাম চর্চা আল্লাহর কাছে কখনো গ্রহণীয় হবে না। পাপিষ্ট ইয়াজিদ সম্পর্কে শরিয়তের ফয়সালা বিষয়ে আলোচনা করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা কাযী মুঈন উদ্দিন আশরাফি। তিনি বলেন, ইয়াজিদ পাপিষ্ট, ফাসেক ও ইসলামচ্যুত এটাই ইসলামের ফয়সালা। ইয়াজিদকে কখনো মুসলমান মনে করা যাবে না। যারা ইয়াজিদি বন্দনায় লিপ্ত তারা অবশ্যই পথভ্রষ্ট। এদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কয়লা ধুইলে ময়লা যাবে না। ইয়াজিদ অপবিত্র ও ধিকৃত। তাকে পবিত্র ও নির্দোষ প্রমাণ করার অপচেষ্টাকে আমরা ধিক্কার জানাই। ইয়াজিদ এতটাই ধিকৃত যে, পৃথিবীতে ইয়াজিদ নামের একজন লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওহাবিবাদ ও সালাফিদের স্বরূপ উন্মোচন বিষয়ে আলোচনা করেন মুহাদ্দিস আল্লামা ওসমান গনি সালেহি। তিনি বলেন, ওহাবি সালাফিরা ইসলামের নামে আবির্ভূত ভ্রান্ত দল। এরা ইসলামের প্রকৃত দর্শন ও আদর্শের বিপরীতে নিজস্ব মতবাদ প্রতিষ্ঠা করায় পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত। যুগে যুগে তাসাউফ চর্চায় আহলে বায়তের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করেন হালিশহর তৈয়বিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভি। তিনি বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ) মাধ্যমে পৃথিবীতে তাসাউফ চর্চা অব্যাহত রয়েছে। তাই আহলে বায়েতকে মানা ও সম্মান করা ফরজ।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কারবালা মানেই অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে আদর্শিক সংগ্রামের নাম। কারবালার চেতনায় দেশ ও সমাজে বিরাজমান অন্যায় অরাজকতা রুখে দেয়ার শপথ নিতে হবে। কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন, লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মুহাম্মদ বেলাল, ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ্ব মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু, মাহফিল প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (রহ) এর সন্তান ব্যরিস্টার আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লি. এর পরিচালক আলহাজ্ব আহমদুল হক, হাজী ইয়াকুব ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক আলহাজ্ব মুহাম্মদ জহিরুল আলম, সমাজসেবক আলহাজ্ব আহসানুল করিম, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল মাবুদ।
উপস্থিত ছিলেন জামেয়ার সিয়ির ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন, মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান সমন্বয়ক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুহাম্মদ লুমাইর মিজান আমীর, জাফর আহমদ সাওদাগর, খোরশেদ আলী চৌধুরী, মুহাম্মদ নাজিব আশরাফ, মুহাম্মদ জহির উদ্দিন, সৈয়দ শরফুদ্দীন, মুহাম্মদ সোলাইমান, মুহাম্মদ ফরিদ মিয়া ও আব্দুর রহমান। এছাড়াও শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যরা মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার থেকে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের নিচ তলায় মহিলাদের জন্য পর্দা সহকারে বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সালাত সালাম শেষে দেশ-জাতির শান্তি ও কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি এবং বিশে^র নির্যাতিত মানবতার মুক্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি