নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
‘দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আগামী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন দেবেন কি না?’ বুধবার বিকালে কক্সবাজারের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভোট চাইলেন।
এর আগে বুধবার বিকাল ৩টা ৫২মিনিটে তিনি সভাস্থলে এসে পৌঁছেন। এরপর তিনি সরাসরি উদ্বোধন মঞ্চে যান। ওখানে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর মঞ্চে গিয়ে বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে তিনি বক্তব্য রাখা শুরু করেন। ৪টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বক্তব্যে কক্সবাজারের উন্নয়নের মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে আরো উন্নয়নের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে গ্রেনেড যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয় সেই গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের ওপর। ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট শান্তি র্যালিতে দিনেদুপুরে গ্রেনেড হামলা করে তারেক-খালেদা জিয়া গং। এসময় আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী মারা যান। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গিয়েছিলাম। ৭৫-এর পর এরা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরা কী দিয়েছে বাংলাদেশকে? জিয়া সরকার তো কিছুই দিতে পারেনি। জামায়াত-বিএনপি এ দেশের মানুষকে অগ্নি, সন্ত্রাস, খুন, মানি লন্ডারিং এগুলো দিয়েছে। আর তাদের আন্দোলন মানেই মানুষকে পুড়িয়ে মারা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ৩ হাজার মানুষ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, ৫০০ মানুষ হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। তার কারাদ- হয়েছে। তারেক রহমানেরও কারাদ- হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ১৮-তে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। ক্ষমতায় এসেছি। টানা তিনবার ক্ষমতায় রয়েছি। দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আগামী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
এ সময় নেতা-কর্মীরা হাত তুলে নৌকায় ভোট দেয়ার ওয়াদা করেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এটুকুই বলব-রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।
‘দোয়া করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব সময় দোয়া করি, আপনারা ভালো থাকেন, সুস্থ থাকুন, উন্নত জীবন পান, সেই কামনা করি।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোন মানুষ ঠিকানাহীন থাকবে না। ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের তথ্য পেলে নাম ঠিকানা দেবেন। তাদের জমিসহ ঘর দেয়া হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই-আত্মীয়স্বজন হারিয়ে রিক্ত, নিঃস্ব। কিন্তু যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা প্রাণ দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কাজ করব। এ দেশের মানুষের মাঝেই খুঁজে নেব প্রয়াত আত্মীয়স্বজনকে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এ দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশীল দেশে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন? আবার আসিবো ফিরে এই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তীরে।
পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে ঠাঁইহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়। মানুষে মানুষে ভরপুর জনসভাস্থলের আশে-পাশে বিজয় সরণীর হলিডে মোড় থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকায় মানুষের ভিড় দেখা যায়।
দুপুর বারোটার পরপর কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জনসভার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর কক্সবাজারের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা একে একে বক্তব্য রেখেছেন। ১১টা থেকে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এরপর সভা মঞ্চে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা, ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সিরাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুবুল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছির, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ড, হাসান মাহমুদ, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, আমিনুল হক আমিন, আশিকুর রহমান, ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, জাফর আলম এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, মাহবুব মোর্শেদ, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আলমগীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ শহীদ, সিরাজুল ইসলাম বাবলা, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, তারেক বিন ওসমান, শামশুল আলম ম-ল।
২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : পাঁচ বছর পর শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে ২৯টি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, পেকুয়া; কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন।
কক্সবাজার জেলার লিঙ্ক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্র্নিমাণ, প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ, বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুনর্র্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষাকাজও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারের পুনর্বাসন প্রকল্প, রামু কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউনিয়ন সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, শহীদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ, নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সড়ক আরসিসিকরণ, টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ, সি বিচ রোড আরসিসিকরণ, মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ, সৈকত-স্মরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য এবং আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনও প্রকল্পও রয়েছে।
এ সময় চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি এবং আকবর বলী ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি নির্মাণ, মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদ বরাবর পোল্ডারসমূহের (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন প্রকল্প।