সুপ্রভাত রিপোর্ট »
ভোজ্যতেলের বর্তমান দামই বলবৎ থাকবে আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। একথা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির। গতকাল (১৯ জানুয়ারি) বুধবার সকালে সাংবাদিকদের দামের বিষয়টি জানান তিনি। এর আগে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগামী মাসের ৬ তারিখ বসে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হলে বাড়াব, কমানোর প্রয়োজন হলে কমাব। সবকিছু বিবেচনা করে যেটা সুবিধাজনক হয়, সেটিই করব।’
গত কয়েক দশকের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েকবছর ধরে রোজা শুরুর ঠিক আড়াই থেকে তিন মাস আগে থেকে মন্ত্রণালয়কে চাপ দিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেয় রিফাইনাররা। ব্যবসায়ীদের এই পুরনো কৌশলের মুখে অব্যাহতভাবে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস এ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার এ্যাসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও পাম তেলের বাড়ানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়।
চিঠিতে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানানো হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণলায় বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠালে প্রাথমিক পর্যালোচনা শেষে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়। বরং আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই-বাছাই এবং আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়ে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আমাদের দেশে মূলত ভোজ্যতেল হিসাবে প্রথমে সয়াবিন তারপরে পাম বা অন্য তেলের নাম আসে। বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।
গত বছর জানুয়ারী মাসে প্রতি লিটার ১১০ এর মত ছিল। তাহলে ৬ তারিখের পর দাম কমাবার সম্ভবনা কতুটুকু, নাকি বাড়বে। এটি বোঝার জন্য আমাদের বর্তমান বিশ্ব বাজার পর্যালোচনা করতে হবে।
সয়াবিন এর উৎপাদনকারী শীর্ষ দুইটি দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। যা পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ, এর পরে রয়েছে আর্জেন্টিনা। গত বছর এল নিনো আবহাওয়াজনিত কারণে কম উৎপাদন হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল ২০২১ এর ডিসেম্বরের দিকে নতুন ফসল আসার পর ঘাটতি মেটানো যাবে। কিন্তু কত কয়েকবছর যাবৎ বিশেষ করে গত বছর থেকে বায়োডিজেল (যার একটি মূল উপাদান সয়াবিন তেল) এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
নিচের গ্রাফটি গত ৫ বছরের উপাত্ত্ব এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, এখানে প্রতি পাউন্ডের মূল্য ইউএস ডলারে দেখানো হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে, ইতোমধ্যে সয়াবিন এর বিকল্প উৎপাদনকারী দেশ খোঁজ করা হচ্ছে।
সয়াবিন এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে পাম এবং সূর্যমুখী তেলের দামও বেড়ে গেছে। এই দুইটি তেলও বায়োডিজেল জ্বালানি এর উপাদান হিসাবে সীমিত আকারে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পামওয়েল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া গত বছর থেকে ৩০% পামওয়েল মিশ্রিত বায়ো ডিজেল উৎপাদনের ঘোষণা দেয়।
নিচে বায়োডিজেল জ্বালানি উৎপাদনের একটি পূর্বাভাস গ্রাফ দেয়া হল।
ধারণা করা হচ্ছে ভোজ্য তেলের সংকট দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। ভোজ্যতেলের এই সংকট নিরসনের জন্য আমাদের এখন থেকে বিকল্প রপ্তানিকারক খুঁজে বের করা, পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ান প্রয়োজন। সরিষা বা অন্যান্য ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে।