সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রায় দুই দশক আগে অভ্যন্তরীণ নদীপথে জাহাজভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ের রাখা এবং এই খাতে শৃঙ্খলার জন্য ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটি ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আলোচনা না করে ভাড়া বৃদ্ধি, দুর্নীতি–অনিয়ম, পণ্য পরিবহনে বাধাদানের মতো ঘটনা ঘটিয়ে এই সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই ডব্লিউটিসি ক্ষুব্ধ করেছে কমবেশি।
ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজমালিকদের একটি সংগঠন আলাদা করে লাইটার জাহাজ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম-ভিত্তিক লইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নতুন একটি শিপিং সেল চালু করতে যাচ্ছে।
মূলত লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং এবং লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) মধ্যে বিরোধের কারণেই নতুন একটি শিপিং সেলটি চালু হতে যাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের আগ্রাবাদ হোটেলের ইছামতি হলে নতুন শিপিং সেল কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভিওএ), কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ এবং ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ চিটাগং— এই তিন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল।
বর্তমানে ডব্লিওটিসির নিয়ন্ত্রণে ১,৩০০টি জাহাজ রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে প্রায় ২,৫০০ লাইটার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে দেশের ৩৪টি রুটে পণ্য পরিবহন করে।
এর মধ্যে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্সের অধীনে প্রায় ৩০০টি লাইটার জাহাজ রয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি। বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকদের রয়েছে আরও ৪০০টি লাইটার জাহাজ।
বিসিভিওএ এবং ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইভোয়াক) নেতাদের মধ্যে বিরোধের কারণে ডব্লিউটিসি ভেঙে যাচ্ছে বলে জানায় একটি সূত্র।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিওটিসি) সমন্বয় ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করে। এ ব্যাপারে স্টেকহোল্ডার সাথে কোনো পরামর্শও করে না, যা ব্যবসা পরিচালনার খরচ বাড়িয়েছে। গত দশ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় প্রতিটন পণ্যে ভাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
তারা জানান, ডব্লিউটিসি সরকার কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা ডব্লিউটিসি’র সদস্য নয়, তাকে কোনভাবেই ডব্লিউটিসি তাদের কোনো বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাখে না।
চট্টগ্রামের ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজি শফিক আহমদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ডব্লিউটিসির সিরিয়াল নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। আমাদের মালিকানায় থাকা প্রায় ৩০০টি জাহাজ কীভাবে পরিচালনা করা যায় সেই বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য প্রথমে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে স্থানান্তর করা হয়। এরপর নদীপথ ব্যবহার করে সারা দেশের নানা গন্তব্যে নেওয়া হয়। এত দিন মূলত ডব্লিউটিসির পরিচালনাধীন লাইটার জাহাজ এবং শিল্পমালিকদের নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে লাইটার জাহাজে বন্দর থেকে সারা দেশের নানা গন্তব্যে পণ্য পরিবহন হতো। এখন নতুন করে ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং-এর নেতৃত্বে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।