সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসি স্থানীয় সময় গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন কথা নেই, বার্তা নেই; হঠাৎ ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকারের কথা যদি বলে বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে… আমরা, আওয়ামী লীগ; আমরাইতো এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে, এই ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য।’ খবর বাংলাট্রিবিউনের।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, তার জন্য যতরকম সংস্কার দরকার, সেটা আওয়ামী লীগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা…। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দিবো’— এই স্লোগানও আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কারণ আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় স্বৈরশাসকরা দেশ শাসন করেছে। তাদের সময় সাধারণ মানুষের ভোট দিতে হয়নি। তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম করে আজ আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময় কোনও কাজ ‘অতিরিক্ত’ করতে পারে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোন সংস্থা, সেটা র্যাব হোক, পুলিশ হোক বা অন্য যে কোনও সংস্থা হোক; তারা অন্যায় করলে আমাদের দেশে সেটার বিচার হয়। কেউ যদি কোনও অন্যায় করে, আমাদের দেশে তার বিচার হয়। এই বিচারে কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় তারা কোনও কাজ অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এমন ব্যবস্থা আছে; সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?’
২০০৯ এ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন; প্রত্যেকটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতস্ফূর্তভাবে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সবসময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন। সে কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেনি। ওই বছরের ৩০ মার্চ তাকে জনগণের রুদ্র রোষে পড়ে পদত্যাগ বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করেছিল। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে সে যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলো… এরপর জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেলো। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এখন ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কাজেই একটা নির্বাচন অবস্থা, সুষ্ঠু হবে— এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল। এবং আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। তো আজ তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও দেবে; দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষার অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সেরকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব সেটাও কিন্তু কমিয়ে এখন মাত্র তিন শতাংশ। সেটাও তারা কাজ করে খেতে পারেন।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা ঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি; মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। আমাদের কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং; আমরা এগুলোর উপরে গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন নিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো…। ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। আমেরিকায় না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।’ কেন আমেরিকা স্যাংশন দিচ্ছে, তা জানেন না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস, আমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনার যে অভিযোগগুলো করেছে, সে ব্যাপারে তার সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সদ্য পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তারও জবাব দেন।
৩৫ মিনিটের এ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য বিরোধীদলগুলোর দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ ব্যবস্থায় ফেরত যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
বিরোধীদলগুলোর বিশেষ করে প্রধান বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, অপরাধ করলে মামলা হবে।
‘রাজনৈতিক মামলায়’ সাজাপ্রাপ্ত প্রধান বিরোধী দলের অসুস্থ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য তাকে তার সাজা বর্তমানে স্থগিত করে বাড়িতে থাকার ও দেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমোদন যে এক সরকারি আদেশে বর্তমানে কার্যকর রয়েছে তা বাতিল করে, জেলে গিয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার সংকট নিয়েও তিনি প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাদের যদি (বিদেশে যাওয়া অনুমতি) চাইতে হয়, তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনও সুযোগ নেই।’
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গ তুলে তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে কিনা জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে বা কোনও দেশ সেটা দেবে?’ খবর বাংলাট্রিবিউনের।
তাদের আবার আদালতে আবেদন করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য, আমার যেটুকু সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতা আছে, সেখানে— তার সাজাটা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসা নিচ্ছে। সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছেন এখন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।’
বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যদি তাকে যেতে হয় (দেশের) বাইরে, তাহলে এখন যে আমি তাকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি, এটা আমাকে তুলে নিতে হবে। তাকে (খালেদা জিয়া) আবার জেলে যেতে হবে এবং আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি রায় দেয়, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।’