ঠিকাদারের পরামর্শ কাল হলো ভবন মালিকের
নিজস্ব প্রতিবেদক <<
ঠিকাদারের পরামর্শেই কাল হলো এনায়েতবাজার গোয়ালপাড়ার ঘোষ পরিবারের। পাঁচতলা ভবনটি হেলে যাচ্ছে মনে করে পিলার দিয়ে সাপোর্ট দিতে গিয়ে গর্ত করায় তা আরো হেলে যায়। আর হেলে পড়ায় এখন ভবন ভাঙা ছাড়া কোনো উপায় নেই। শনিবার রাতে হেলে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বেরিয়ে আসেন এবং গতকাল রোববার দুপুরের পর থেকে নিজ উদ্যোগে তা ভাঙার কাজ শুরু করে।
১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে প্রায় ৬০০ বর্গফুট জায়গার উপর পাঁচতলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছিলেন কার্তিক ঘোষ। ভবনের চারপাশে কোনো জায়গা না ছেড়ে গড়ে তোলা ভবনটি কম জায়গায় বেশি উচ্চতার ভবন হিসেবে দেখা যায়। এখন আর কার্তিক ঘোষ বেঁচে নেই। তার ছেলেরা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে বসবাস করেন। কিন্তু এতোবছর পর এসে ভবনটি হেলে পড়লো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে কার্তিক ঘোষের বড় ছেলে দীপ নারায়ন ঘোষ বলেন, কেন হেলে পড়েছে বলতে পারবো না। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে ভবনটি কিছু হেলে গিয়েছিল। তখন একজন ঠিকাদারের পরামর্শ নিলাম। ঠিকাদারের পরামর্শে যেদিকে হেলে গেছে সেদিকে দুটি পিলার বসানোর জন্য গর্ত করছিলাম। আর গর্ত করার পর গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে এটি অনেক বেশি হেলে পড়ে।
এদিকে ভবনটি হেলে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান, অথরাইজ অফিসার মোহাম্মদ হাসান, ফায়ার সার্ভিস ও মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিগণ পরিদর্শন করতে যান।
ভবনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভবনটি সামান্য হেলে যাওয়ার পর পিলার নির্মাণের জন্য আবারো গর্ত করাটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। আর এতেই ভবনটি দ্রুত হেলে গিয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এখন ভাঙা ছাড়া উপায় নেই।’
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ভেতর থেকে কোনো মালামাল বের করা যায়নি। ভবনের আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনদের সরিয়ে দিয়ে বাঁশের ঘেরা দেয়া হয়েছে। ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এই শঙ্কা কাজ করছে মানুষের মধ্যে। গতকাল দুপুরের পর ছয়জন শ্রমিক ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল ভাঙার কাজ। প্রথমদিকে ছয়জন দিয়ে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হলেও আজ সোমবার থেকে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। একইসাথে ভবন ভাঙায় নিয়োজিত শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে ভবনের মালামাল বের করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।
উল্লেখ্য, হেলেপড়া ভবন প্রকৌশল-প্রযুক্তি দিয়ে আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু এই ভবনে ভুলভাবে পিলার বসাতে গিয়ে তা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলো।
এর আগে নগরীর সুন্নীয়া মাদ্রাসা এলাকায় হেলেপড়া ভবন এবং বহদ্দারহাটে হেলেপড়া ভবন ঠিক করা হয়েছিল।