ড্রাফট ৯.৫ থেকে ১০ মিটারে উন্নীত হচ্ছে, বাড়ছে দৈর্ঘ্যও
ভূঁইয়া নজরুল »
১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। বর্তমানে ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীর (ড্রাফট) জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়লেও এখন তা ১০ মিটারে উন্নীত করার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। একইসাথে ১৯০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর অনুমোদন না থাকলেও আগামীতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়বে বন্দরের জেটিতে। তবে বড় দৈর্ঘ্য ও গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন জেটি তৈরি করা না হলে দিনশেষে বাড়বে না কনটেইনার হ্যান্ডেলিং।
কর্ণফুলী নদীর তীরে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন জিসিবি (জেনারেল কার্গো বার্থ), সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) এবং এনসিটি (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) রয়েছে। এসব টার্মিনালে ২১টি বার্থ থাকলেও কার্যত জাহাজ ভেড়ানো যায় ১৮টি বার্থে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনালে একসঙ্গে ১৮টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাহাজের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় বার্থের সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়া দুই জাহাজের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য খালি রাখতে হয়। ২০০৭ সালে এনসিটি চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি বাড়েনি। যদিও নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) চলতি বছরের জুনে চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। সেই টার্মিনালের জেটিতে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজও ভিড়তে পারবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের ঘোষণায় আসছে ড্রাফট ও জাহাজের দৈর্ঘ্য বিষয়টি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘বর্তমানে বন্দরের ড্রাফট ৯ দশমিক ৫ মিটার ও সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারে। কিন্তু আমরা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আগামীতে ১০ মিটার ড্রাফটে উন্নীত করা হবে এবং একইসাথে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ পাবে শিপিং লাইনগুলো।’
ড্রাফট বাড়লে সুবিধা কি?
জাহাজের ড্রাফট বাড়লে বন্দর ব্যবহারকারীরা কি সুবিধা পাবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘ড্রাফট বাড়লে বড় দৈর্ঘ্যরে জাহাজ বেশি পণ্য নিয়ে বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারবে। এতে জাহাজগুলোতে কনটেইনারের সংখ্যাও বাড়বে।’
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব জাহাজ ভিড়ে সেসব জাহাজে ১৬০০ থেকে ১৭০০ একক কনটেইনার থাকে জানিয়ে এমএসসি শিপিং লাইনের সিনিয়র ম্যানেজার আজমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘ড্রাফট যদি ১০ মিটারে উন্নীত করা হয় তাহলে প্রতি জাহাজ ২৭০০ থেকে ২৮০০ একক কনটেইনার নিয়ে আসতে পারবে। এতে পণ্য পরিবহনে গতি বাড়বে। তবে জাহাজের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে কম জাহাজ ভিড়তে পারবে জেটিগুলোতে।’
ড্রাফট বাড়ানো অবশ্যই সুখবর, কিন্তু জেটির সংখ্যা না বাড়ালে বিপদ বাড়বে জানিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে জেটির সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে। বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং দিন দিন বাড়ছে। এই বাড়তি পণ্য হ্যান্ডেলিং করতে আরো কমপক্ষে ৬০টি জেটি প্রয়োজন।’
ড্রাফট কিভাবে বাড়ানো হবে?
বর্তমানে জিসিবির ১২টি জেটির মধ্যে ২ থেকে ১০ নম্বর জেটিতে ৮ দশমিক ৫৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যায়। ১১ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে গভীরতা বেশি থাকায় এই অংশে বর্তমানে ড্রাফট রয়েছে ৯ দশমিক ৫ মিটার। কিন্তু আগামীতে জিসিবিতে ড্রাফট বাড়ানোর সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তবে সিসিটি ও এনসিটিতে বর্তমানে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট থাকলেও তা ১০ মিটারের বেশি ড্রাফটে উন্নীত করা সম্ভব বলে স্টাডিতে উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সার্ভে অনুযায়ী আমরা আমাদের জেটিগুলোর ড্রাফট ১০ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত উন্নীত করতে পারবো। আর এ রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা কিছু ড্রাফট শূন্য রেখে ১০ মিটার ড্রাফট পর্যন্ত জাহাজ ভেড়ানোর অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’
এ ড্রাফট কিভাবে মেইনটেইন করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে আমরা তা রক্ষণাবেক্ষণ করবো এবং তা সম্ভব।
অপরদিকে পতেঙ্গায় বোট ক্লাব ও চিটাগং ড্রাইডকের পাশে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদীর ওই অংশে স্বাভাবিকভাবেই গভীরতা বেশি। এর সাথে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তা ১০ দশমিক ৫ মিটারের বেশি ড্রাফট রাখা সম্ভব।’
কিভাবে ঘোষণা আসবে বেশি ড্রাফট ও দৈর্ঘ্যরে ?
ড্রাফট বৃদ্ধি ও বড় দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানোর ঘোষণা কিভাবে আনা হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট চলতি মাসেই আমাদের হাতে চলে আসবে। আর তা এলে আমাদের বোর্ডে পাশ করিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ড্রাফট ১০ মিটার ও সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারবে এমন ঘোষণা দেবো।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৩ শতাংশ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮টি একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়।
চাচাকে হত্যা