ব্যবসায় অসাধুতা কোনোভাবেই কাম্য নয়

ভারত রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করেছে, এই খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়ে গেল পেঁয়াজের দাম। বাড়তি শুল্ক দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়নি অথচ পাইকারি বাজারে মানভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিল ব্যবসায়ীরা। খুচরায়ও বেড়ে গেল তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
ভারত গত শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সেই খবর শনিবার সন্ধ্যায়ই ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন। আর তখন থেকেই পাইকারি বাজারে দাম বাড়তে শুরু করে। শনিবার আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। রোববার তা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় ।
যদিও ভারত থেকে রোববার পর্যন্ত যে পেঁয়াজ এসেছে, তাতে নতুন হারে শুল্ক আরোপ করা হয়নি বলে আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন। ফলে বাড়তি দাম দিতে হয়নি। নতুন শুল্ক সোমবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, মোট চাহিদার ৩০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সাধারণত ব্যবসায়ীরা ভারত থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করেন। সেখানে পাওয়া না গেলে অন্য দেশে খোঁজ করা হয়। দেশীয় কৃষকদের সুরক্ষা দিতে গত জুন পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দেওয়া বন্ধ রেখেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। তবে মে মাসের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৪০-৪৫ থেকে ৮০-৯০ টাকা হয়ে যায়। তখন আবার আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু হয়। ডিএইর তথ্যানুযায়ী, গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন। যদিও অনুমতি দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ টনের।
ব্যবসায়ীদের একটি প্রবণতা লক্ষণীয় যে, কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর খবর পেলেই তারা বাড়িয়ে দেন কিন্তু কমার খবরে তাদের অজুহাতের শেষ নেই। এবার ভারতে শুল্ক আরোপের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দাম বাড়িয়েছেন যদিও বর্ধিত দামে তখন পর্যন্ত তাদের কিনতে হয়নি। আর দাম কমলে তারা যুক্তি দেখান যে তাদের পণ্য দাম কমার আগে কেনা তাই আগের দামেই বিক্রি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের এই অসাধু প্রবণতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পেঁয়াজ নিয়ে মুশকিলে আছে ক্রেতারা। বছরে কয়েকবার এই পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠা-নামা করে। মোট চাহিদার ত্রিশ শতাংশ আমদানিতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে পুরোটা আমদানি করতে হলে না জানি পরিস্থিতি কত ভয়াবহ হতো। ধারাবাহিক এই ভোগান্তির অবসান ঘটাতে পারে বাদবাকি ত্রিশ শতাংশের উৎপাদনের ব্যবস্থা দেশেই করা। সরকার উদ্যোগ নিলে তা সম্ভব হবে বলে মনে করি।