ভূঁইয়া নজরুল »
আগামীর বন্দর বলে খ্যাত বে টার্মিনালের ভূমি বরাদ্দ পেতেই ৭ বছর লেগেছে। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া বে টার্মিনালের কার্যক্রমে প্রথম দফায় ২০১৮ সালে ৬৮ একর ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় সম্প্রতি ৮০৩ একর ভূমির বরাদ্দের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। আর এতে ভর করে ২০২৪ সালে বে টার্মিনাল চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত ১৯ আগস্ট বে টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে ২০২৪ সালে তা চালুর ঘোষনা দেন। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যার রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানও একই আশাবাদের কথা বলেন। কিন্তু এই আশাবাদের অগ্রগতি কি?
২০২৪ সালকে টার্গেট করে এগিয়ে যাওয়ার কথা আবারো স্মরণ করিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বে টার্মিনালের পরামর্শক নিয়োগের জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনা যাচাই বাছাই শেষে আমরা আগামী নভেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি আরো বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট পাওয়ার পরই বে টার্মিনালের ডিটেইলড ডিজাইন চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বে টার্মিনালের তিনটি টার্মিনালের মধ্যে একটি টার্মিনাল (মাল্টিপারপাস) নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী প্রকল্পের অগ্রগতি সরেজমিনে দেখতে আজ শুক্রবার বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শনে আসছেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস।
তবে বে টার্মিনালে নির্মাণের পাশাপাশি ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ নিয়ে এখনই ভাবা প্রয়োজন বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে নিয়োজিত সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিটাগাং চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তরফদার রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে বে টার্মিনালের গতি ধীর চললেও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বে টার্মিনাল নিয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। আর এই সক্রিয়তার নমুনা হিসেবে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত এবং একটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও এগুচ্ছে। তবে বে টার্মিনালের জন্য পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (সমুদ্রের পানি সরাসরি যাতে জেটিতে আঘাত করতে না পারে) নির্মাণের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
যেই প্রকল্প নিয়ে এতোসব ভাবা হচ্ছে, সেই প্রকল্পের জন্য ভূমি কি বরাদ্দ পাওয়া গেছে? ২০১৮ সালে ৬৮ একর ভূমি বরাদ্দ পেলেও এখনো বরাদ্দের বাকি রয়েছে ৮০৪ একর ভূমির। তবে এই ৮০৪ একর ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ( অধিগ্রহণ-২) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়ে নৌ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এখন জেলা প্রশাসন ভূমি পরিমাপ করে মূল্য নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে তা পরিশোধের জন্য চিঠি দেবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আমরা সেই চিঠি পেয়ে যাবো।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনিঘাট থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনে সাগর পাড়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় গড়ে উঠবে এই বে টার্মিনাল। ২ হাজার ৫০০ একর ভূমিতে গড়ে উঠতে যাওয়া এই টার্মিনালের প্রথম দফায় ৬৮ একর ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় আরো ৮০৩ একর বরাদ্দ পাচ্ছে। জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত, বাঁকা চ্যানেল কিংবা ড্রাফটের বিবেচনা কর্ণফুলী নদীর জেটিতে ভিড়লেও বে-টার্মিনালের ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর জেটিতে পৌছাতে একটি জাহাজকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা শূন্য কিলোমিটারের মধ্যেই বার্থিং করতে পারবে। বে টার্মিনাল নির্মাণ হলে যেকোনো দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। এখানে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ পরিচালনা করা যাবে। বিদ্যমান পোর্ট জেটিতে একসাথে ১৬টি জাহাজ বার্থিং করা গেলেও বে টার্মিনালে গড়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একইসাথে বার্থিং করা যাবে। এজন্য এই টার্মিনালকে আগামীর বন্দর বলা হয়ে থাকে।