বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক গতকাল ১ নভেম্বর দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দের সাথে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
এ সময় চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, পরিচালকবৃন্দ মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, মাহবুবুল হক মিয়া এবং বিশ্বব্যাংকের অপারেশন ম্যানেজার গেইল মার্টিন, সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট সেক ওমর টিডিয়ান ডিয়ালো ও প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর দিলশাদ দোসানী বক্তব্য রাখেন।
বিশ্বব্যাংক কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন,বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে বাড়ছে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ। দেশের এ অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকও।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরের চাহিদা যাচাই করে অর্থায়ন করে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে সামাজিক ও পরিবেশগত ফিজিবিলিটি স্টাডির অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতের মতামত জানতে মতবিনিময়ে মিলিত হয়েছি আমরা। ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নেয়া বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ব্রেকওয়াটার এবং চ্যানেল নির্মাণের দ্রুত অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। এই বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নৌ-যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে লজিস্টিক্স হাবে পরিণত হবে চট্টগ্রাম। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাথে ভারতের ভূ-বেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ ভুটান এবং নেপালের মধ্যে চলমান কানেক্টিভিটি প্রকল্পও ফলপ্রসূ হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের চলমান বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি চেম্বারের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিশ্বব্যাংকের প্রকিউরমেন্ট প্রসেসের উপর বিশেষ কর্মশালা আয়োজনের আশ্বাস প্রদান করেন।
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০% পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫টি এবং কক্সবাজারে ৩টি শিল্পাঞ্চলে বাড়ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। ফলে ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরো গতিশীল করতে বন্দরের নেয়া বে-টার্মিনাল সম্পূর্ণরূপে উপযুক্ত ব্যবহার করতে উন্মুখ হয়ে আছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তাই চেম্বার সভাপতি বে-টার্মিনালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নসংক্রান্ত সকল পরিকল্পনা সম্পন্ন করে দ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থনৈতিক করিডোর আরো গতিশীল হবে। একই সাথে বে-টার্মিনালের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠা মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার আহ্বান জানান। তিনি চট্টগ্রামে প্রাইভেট সেক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদানে চিটাগাং চেম্বার ও বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স এর সাথে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বে-টার্মিনালসহ যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে তার সুফল পাওয়া যাবে এবং তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে স্কিল ডেভেলাপমেন্টে বিনিয়োগ এবং বিশ্বব্যাংকের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ও উদ্যোগগুলোর তথ্য প্রাইভেট সেক্টরের সাথে নিয়মিত শেয়ার করার আহ্বান জানান।
চেম্বার নেতৃবৃন্দ বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল পেতে হলে দেশে মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি কুমিল্লা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, রেল যোগাযোগে প্রাইভেট সেক্টরকে উৎসাহিতকরণ, নৌ-বন্দর কেন্দ্রিক সড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারণ, বিশ্বব্যাংকের নেয়া প্রকল্পগুলোতে প্রাইভেট সেক্টর ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বিজ্ঞপ্তি